Monday, February 10, 2025

একনজরে মরহুম নায়েবে শাইখুল ইসলাম শাহ্ সূফি আব্দুল ওয়াহিদ (রহঃ) এর জীবন ও কর্মঃ

জীবনী সংগ্রহ ও সংকলনঃ মাওঃ মুহাঃ তানভীর হাসান

(দৌহিত্র- শাইখুল ইসলাম আব্দুল ওয়াহিদ (রহঃ)।

পরিচালক- হযরত হাতেম আলী রহঃ ফাউন্ডেশন (HARF)।

জন্মঃ ১৯৪৫ সালের ১লা সেপ্টেম্বর রোজ শনিবার বর্তমান বরিশাল জেলাধীন বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুধল গ্রামে।

পিতাঃ মোজাদ্দেদে আ’যম হাফেজে কুরআন ও হাফেজে হাদীস বাহরুল উলূম হযরত মাওঃ মোঃ হাতেম আলী (রহঃ) ।

মাতাঃ মরহুমা আছিয়া খাতুন

অধ্যয়ন

হাতে খড়িঃ তাঁর পিতা মোজাদ্দেদে আ’যম হযরত মাওলানা মোঃ হাতেম আলী (রহঃ) এন নিকট।

দাখিলঃ ১৯৫৮ ইং, দুধল ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা।

আলিমঃ ১৯৬২ ইং, দুধল ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা। (বিঃদ্রঃ তদানিন্তন সময়ে আলিম শ্রেনীর চার বছর মেয়াদী কোর্স ছিল)

ফাজিলঃ ১৯৬৪ ইং দুধল ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা।

কামিল (হাদীস) ঃ ১৯৬৭ ইং, মাদ্রাসা-ই-আলিয়া, ঢাকা।

কামিল (তাফসিরঃ ১৯৭৩ ইং, মাদ্রাসা-ই-আলিয়া, ঢাকা।

ইন্টার মেডিয়েটঃ ১৯৬৬ ইং, ভোলা, কলেজ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যয়ঃ ১৯৬৬-১৯৬৭ ইং।

শিক্ষক মন্ডলীঃ তাঁর প্রধান ও মূল শিক্ষক ছিলেন তাঁর পিতা মোজাদ্দেদে আ’যম হযরত মাওলানা মোঃ হাতেম আলী (রহঃ); তাঁর কাছে তিনি তাফসীর, হাদীস, ইলমে তাছাওউফ ফিক্বাহ, উসূল, মাজাহাবের ও অতীত যুগের নায়েবে রাসূলদের অসংখ্য কিতাবের পূর্ণ দার্‌স গ্রহন করেন এবং আল্লাহর খাছ রহমতে শারীয়াতের ইলেমের মানদুব দরজায় পৌছাতে সক্ষম হন।

ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, মুফতি আমিমুল ইহসান, মুফতি ওবায়দুল হক্ব সাহেব (রহঃ) তার ওস্তাদদের মধ্যে অন্যতম, এছাড়াও তদানিন্তন সময়ের খ্যাতনামা ওস্তাদদের কাছে ইলম অর্জন করেন।

দাম্পত্য জীবনঃ

১মাঘ ১৩৭২ বঙ্গাব্দ , ১৫ জানুয়ারী ১৯৬৬ ইং রোজ শনিবার মায়ের একান্ত ইচ্ছায় বর্তমান বাকেরগঞ্জ উপজিলার দুধল ইউনিয়নের পিলখানা গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের আব্দুল হামিদ মোল্লার ৫ম কন্যা মুসাঃ নুরজাহান বেগমের সাথে দাম্পত্য জীবন শুরুকরেন। তাদের বিবাহ পড়ান মোজাদ্দেদে আ’জম হযরত হাতেম আলী (রহঃ)। সুন্নতে নববীর অবলম্বনে গড়া তাদের সুখি দাম্পত্য জীবন এক কথায় সকলের জন্য দৃষ্টান্ত ।

সন্তানঃ তাদের আমানতে আল্লাহ ৭ মেয়ে ৫ ছেলে দান করেন এর মধ্যে ২ ছেলে ১ মেয়ে শিশু অবস্থায় আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে ইন্তেকাল করে। বর্তমানে বড় সাহেবজাদা মুফতি শাহ মুহাঃ সাইফুল্লাহ (হাফিঃ) ,অধ্যক্ষ,দুধল ইসলামিয়া ফাযিল মাদ্রাসা।) দুধল দরবারের পীর সাহেবের দ্বায়িত্বে আছেন।

মেঝ সাহেবজাদা মুফতি শাহ মুহাঃ সফিউল্লাহ (উপাধ্যক্ষ,দুধল ইসলামিয়া ফাযিল মাদ্রাসা।) খিলাফত প্রাপ্ত মেঝ পীরসাহেব। ছোট সাহেবজাদা মুফতি শাহ মুহাঃ শরীয়াতুল্লাহ ( আরবি প্রভাষক, ,দুধল ইসলামিয়া ফাযিল মাদ্রাসা।) খিলাফত প্রাপ্ত ছোট পীর সাহেব।

এছাড়াও ৬ জন কন্যার প্রত্যেককে বড় বড় আলেমদের নিকট বিবাহ প্রদান করেছেন।

কর্ম জীবনঃ শিক্ষকতাঃ ১লা জুন ১৯৬৯ ইং সালে দুধল ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন।

গবেষণাঃ

মাদরাসায় দায়িত্ব পালনের সাথে সাথে মোজাদ্দেদে আ’যম হযরত হাতেম আলী (রহঃ) এর অধীনে পূর্ণাঙ্গ দ্বীন ইসলামের উপরে এবং বিশেষত ইলমে তাছাওউফ এর উপরে বিশেষ উচ্চতর গবেষণা করেন ও মোজাদ্দেদে আ’যমের সাথে সফরে ও বাহাসে অংশ গ্রহন করেন।

হেজাজের পথেঃ

৩০ বছর বয়সে ১৯৭৪ ইং সালে তার পিতা মোজাদ্দেদে আ’যম হযরত হাতেম আলী (রহঃ) ও তার বিদূষী মাতা মরহুমা আছিয়া খাতুনের সাথে হজ্বব্রত পালন করেন এবং তথায় তৎকালীন সৌদি আরবের বাদশা ফয়সালের আমন্ত্রনে বিশেষ রাজকীয় অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।

খেলাফত লাভঃ

১৯৭৪ ইং সালে হজব্রত পালনরত অবস্থায় মোজাদ্দেদে আ’যম হযরত হাতেম আলী (রহঃ) তাকে পূর্ণাঙ্গ দ্বীনের বিশ্ব অভিযান পরিচালনা করার নির্দেশ দেন এবং বায়াতের খেলাফত ও দুধল দরবার শরীফের মূল অংশের দায়িত্ব প্রদান করেন।

দ্বীন প্রচারঃ মোজাদ্দেদে আ’যম কর্তৃক খেলাফত লাভ করে তিনি মহান রব্বুল আলামীন ও তাঁর রাসূল (সাঃ) এর সন্তুষ্টির নিমিত্তে দ্বীন প্রচারের মহান পেশায় সফল ভাবে আত্ম নিয়োগ করেন। এবং জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ দ্বীনের শিক্ষা প্রচার-প্রসারে সর্বাত্মক ভাবে এ মহান দায়িত্ব পালন করেছেন।

অধ্যক্ষের পদ থেকে অব্যাহতি গ্রহনঃ

দুধল ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় ৩২ বছর পূর্ণ সুনাম সততা ও সফলতার সাথে অধ্যক্ষ পদে দ্বায়িত্ব পালন করে পূর্ণাঙ্গ দ্বীন গবেষণা ও প্রচার-প্রসার অধিকতর মনোনিবেশের নিমিত্তে “৩১ শে জুলাই ২০০২ইং সালে অধ্যক্ষের পদ থেকে স্বেচ্ছা অব্যাহতি গ্রহন করেন। তিনি অধ্যক্ষ থাকা অবস্থায় দুধল ইসলামীয়া ফাজিল মাদ্রাসাকে কিতাবি ইল্‌ম চর্চার শ্রেষ্ট প্রতিষ্ঠান হিসেবে পূর্ণ সফলতার সাথে গড়ে তুলতে সক্ষম হন।

সভাপতির পদ অলংকৃত করণঃ

অধ্যক্ষের মহান পেশা থেকে অব্যাহতি গ্রহনের পর থেকে ইন্তেকালের পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত তিনি দুধল ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতির দ্বায়িত্ব পূর্ণ সততা ও আস্থার সাথে পালন করেন ।

গ্রন্থ প্রণয়নঃ

তার দ্বীনি ইল্‌মের জগতে বিচরণ ছিল ইলমি সমুদ্রের গভীরে এবং সে ইলেম থেকে অকাতরে বিলিয়েছেন ইন্তেকালের পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত। মুসলিম উম্মাহ’র জন্য প্রণয়ন করেন রদ্দে কাদিয়ানি, জান্নাতেরে বর্ণনা, জাহান্নামের বর্ণনা, তরিকত শিক্ষা সহ ১৩ খানার অধিক মহামূল্যবান গ্রন্থ।

দ্বীনি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা

তার সংক্ষিপ্ত হায়াতে মাদ্রাসা,স্কুল, মসজিদ, খানকা, সংগঠন সহ ৬০ টির অধিক দ্বীনি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন।

আংশিক/বাতিল ফেরকা বিরোধী আক্লান্ত সংগ্রাম

ইলমে তাছাওউফ অস্বীকার কারী,মোস্তাহাব ঘোষণা কারী, পূর্ণাঙ্গ দ্বীন ইসলামকে ছেটে কেটে ফরজ বিধানের কিছু অংশ রেখে কিছু অংশ বাদ দিয়ে নিজেদের মত করে মুক্তির ঘোষণা কারী আংশিক বাদী নাকেছ আলেম সমাজ, ইসলামে শিরক, বিদয়াত প্রচলন কারী বাতিল ফেরকা এবং খতমে নবুয়াত অস্বীকার কারী কাদিয়ানী কাফিরদের বিরুদ্বে সংগ্রাম করেছেন আজীবন। ছাত্র জীবন থেকেই লড়েছেন অগণিত বাহাছে (যার মধ্যে ঢাকা ধর্মগঞ্জ, কুয়াকাটা, গুলিশাখালীর বাহাছ অন্যতম)। প্রত্যেকটি বাহাছে মহান আল্লাহ তা’লা তাকে মহা বিজয় দান করেন। বাতিল ফেরকা দমনে প্রণয়ন করেছেন দলীল ভিত্তিক অখন্ডনীয় একাধীক গ্রন্থ। (রদ্দে কাদিয়ানী তার মধ্যে অন্যতম)। ইল্‌মে তাছাওউফের প্রত্যেকটি মাসয়ালা কিতাবী ধারায় (তারিফ, ছবাব, আলামত, এলাজ ভিত্তিক) শিক্ষা ব্যতিত ইল্মে তাছাওউফ এর ফরজিয়াত অর্জন করা সম্ভব নয়, যা দলীল ভিত্তিক খন্ডনের ব্যাপারে ওপেন চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করেন। কিন্তু তার জীবদ্দশায় কেউ তা গ্রহনের সাহস করেনি।

মোজাদ্দেদে আ’যমের নামে সংগঠন প্রতিষ্ঠাঃ

কোরআন, হাদীস, মাযহাবের কিতাব ও অতীত যুগের নায়েবে রাসূলদের কিতাবের অকট্য দলীলের ভিত্তিতে মোজাদ্দেদে আ’যম হযরত হাতেম আলী (রহঃ) কর্তৃক পূনরুদ্ধার কৃত পূর্ণাঙ্গ দ্বীনি ইসলামের শিক্ষাকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দেয়ার নিমিত্তে ২০১২ ইং সালের ৮ই নভেম্বর প্রতিষ্ঠা করেন “হযরত হাতেম আলী (রহঃ) ফাউন্ডেশন (HARF)।

ইন্তেকালঃ

১৯ শে রজব শুক্রবার (আরবি মাস গণনার নিয়ম অনুযায়ী বার গণনা করা হয়েছে) ১৪৩৬ হিজরী, ২৪ শে বৈশাখ ১৪২২ বঙ্গাব্দ, ২০১৫ ইং মে অসংখ্য পূর্ণাঙ্গ দ্বীন শিক্ষার্থী ত্বলেবে ইলেম (মুরিদ) এবং ফরজে আইন ও ফরজ কোফায়া দরজায় অসংখ্য আলেমদের রেখে ইহকালের বন্দি জীবনের ইতি টেনে মহান রব্বুল আলামীনের সান্নিধ্যে গমন করেন। ইন্তেকালের সময়ে তিনি তার সহধর্মীনী ও নায়েবে রাসূল পর্যায়ের যোগ্য তিনজন ছাহেব জাদা এবং ছয় জন কন্যা-জামাতা ও ২২ জন নাতী রেখে যান।

মহান রবের কাছে আরযি-হে আমর রব, আপনি আমাদের সব থেকে আপনজন দ্বীনের হাদি যার কাছে আমরা পূর্ণাঙ্গ দ্বীন ইসলামের শিক্ষা লাভ করেছি; আপনার প্রিয় ওয়ালী মরহুম নায়েবে রাসূল হযরত মাওলানা শাহ্ মোঃ আব্দুল ওয়াহিদ (রহঃ) কে কবুল করুন। তার জীবনের প্রতিটি নেক কর্মের জাযায়ে খায়ের দান করুন তাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের আ’লা মাকাম দান করুন। তার পবিত্র রুহের সাথে সমস্ত নবী রাসূল ও নায়েবে রাসূল গনের রুহের মিলন ঘটিয়ে দিন। আমাদেরকে তার রেখে যাওয়া পূর্ণাঙ্গ দ্বীনের মিশনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার তাওফিক দান করুন। সমস্ত নবী রাসূল এবং তাঁর ও নায়েবে রাসূল ও নায়েবে রাসূল গনের রুহের মিলন ঘটিয়ে দিন। আমাদেরকে তার রেখে যাওয়া পূর্ণাঙ্গ দ্বীনের মিশনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার তাওফিক দান করুন। সমস্ত নবী রাসূল এবং তাঁর ও নায়েবে রাসূল গনের রুহানী ফায়েজ আমাদের নসীব করুন। আমাদের কৃত সকল গুনাহকে ক্ষমা করুন। সকল প্রকার খারপ কাজ থেকে বিরত রাখুন। আবরার বান্দাদের সাথে মৃত্যু নসীব করুন। আমিন।