আল−াহ্ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন
অর্থ প্রত্যেক জাতির জন্য আমি কুরবানী নির্ধারণ করিয়া দিয়াছি যাহাতে
তাহারা আমার পক্ষ হইতে তাহাদিগকে দেওয়া গৃহপালিত চতুষ্পদ পশুসমূহের
উপর আমারই নাম লয় অর্থাৎ আমারই দেওয়া জন্তু আমার নামে কুরবানী
করে।
❑ হযরত রাসূলে কারীম (ছঃ) ইরশাদ করিয়াছেন
অর্থÑ ‘‘যে ব্যক্তি অর্থ-সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী করে না, সে যেন
আমাদের ঈদ্গাহে না আসে।’’
কুরবানীর ফজিলত
হযরত রাসূল (ছঃ) বলিয়াছেনÑ ‘‘কুরবানীর দিনে কোন মানুষের পক্ষে
এমন কোন কাজ করা সম্ভব নয় যাহা আল−াহ্র দরবারে কুরবানী অপেক্ষা
প্রিয় ও পছন্দনীয় হইতে পারে।”
❑ হযরত রাসূল (ছঃ) আরো বলিয়াছেনÑ ‘‘কুরবানীর পশুর শিং, পশম
এবং ক্ষুর- সবকিছুই কিয়ামতের দিন আল−াহ্র দরবারে উপস্থিত করা হইবে।
আর কুরবানীর পশু যবেহ্ করিবার কালে যে রক্ত প্রবাহিত হয়, তাহা গড়াইয়া
জমিনে পড়ার পূর্বেই আল−াহ্র দরবারে পৌঁছিয়া যায়। সুতরাং তোমরা
স্বাচ্ছন্দ মনে ‘খুলুছিয়াত্’ এর সহিত কুরবানী করিও।”
❑ হাদীসে আছেÑকুরবানীর পশুর প্রতিটি পশমের বদলে একটি করিয়া
নেক হয়।
কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার মাসায়েল
যে ব্যক্তির সারা বছরের খোরপোষ, সংসারের অন্যান্য আবশ্যকীয় খরচ
এবং ঋণ বাদ দিয়া সাড়ে সাত তোলা সোনা বা সাড়ে বায়ানড়ব তোলা রূপা বা
তৎসম পরিমাণ অর্থ অথবা মাল-আসবাব আছে তাহার উপর কুরবানী
ওয়াজিব অর্থাৎÑ যিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখের ফজর হইতে ১২ তারিখ সন্ধ্যা
পর্যন্ত যদি মালিকে নিছাব হয় তবে তাহার উপর কুরবানী ওয়াজিব হইবে।
প্রকাশ থাকে যে, পুরো সময় ধনী থাকা শর্ত নয়, কেউ যদি কুরবানীর
প্রথম ওয়াকতে গরীব থাকে এবং শেষ ওয়াক্তে ধনী হয় তাহা হইলে তাহার
উপর কুরবানী ওয়াজিব। আবার ইহার বিপরীত হইলে ওয়াজিব হইবে না।
উপরোক্ত হিসাবে মালদার হইলেও কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার জন্য বালেগ
হওয়া শর্ত। অর্থাৎ না-বালেগ ছেলেমেয়ে মালদার হইলেও তাহার উপর
কুরবানী ওয়াজিব নহে। নাবালেগের পক্ষ হইতে কুরবানী করা মুরব্বীদের
উপরও (নিজের টাকা ব্যয় করিয়া) ওয়াজিব নহে, বরং মুস্তাহাব।
যে ব্যক্তি মুসাফিরী হালতে আছে, সে মালদার হইলেও তাহার উপর
কুরবানী ওয়াজিব নহে। তবে কোনও মুসাফির কুরবানীর নিয়্যাতে পশু কিনিয়া
ফেলিলে তাহার উপর কুরবানী ওয়াজিব হইয়া পড়ে।
যে ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব, সে নিজের নামে কুরবানী না করিয়া
পরিবারের কিংবা আত্মীয়-স্বজনদের কাহারও নামে করিলে তাহার ওয়াজিব
আদায় হইবে না।
তদ্রƒপ, কাহারও পক্ষ হইতে তাহার অনুমতি ছাড়া কুরবানী করিলে শুদ্ধ
হইবে না। এইরূপ ক্ষেত্রে কুরবানীর পশুতে অন্য যাহারা শরীক হইবে,
তাহাদেরও কুরবানী নষ্ট হইয়া যাইবে।
সম্পত্তির কয়েকজন অংশীদার একানড়বভূক্ত থাকিলে যদি তাহাদের মাল
পৃথক করিলে প্রত্যেকেরই কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার পরিমাণ মাল হয়, তাহা
হইলে প্রত্যেকেরই কুরবানী করিতে হইবে। একানড়বভূক্ত পরিবার বলিয়া শুধু
একজনের নামে কুরবানী করিলে সকলের ওয়াজিব আদায় হইবে না।
ভাগে কুরবানী করিবার মাসায়েল
উট, গরু ও মহিষ এই তিন প্রকারের পশু সর্বোচ্চ সাতজন ভাগী হইয়া
কুরবানী করিতে পারে। সাত ভাগের এক ভাগকে আবার ভগড়বাংশ করিয়া
(যেমন- কাহারও আঁধা ভাগ আর কাহারও দেড় ভাগ) শরীক লওয়া দুরুস্ত
নাই। এইরূপ করিলে কাহারও কুরবানী হইবে না।
ভেড়া, বকরী ও দুম্বা এইগুলির প্রত্যেকটি শুধু একজনের নামেই কুরবানী
করিতে পারিবে। শরীকদারদের মধ্যে কোন একজনের কুরবানীর নিয়্যাত না
হইয়া গোশ্ত খাওয়ার নিয়্যাত হইলে কাহারও কুরবানী হইবে না।
গরু, মহিষ অথবা উট কিনিবার সময়ে উহা দ্বারা নিজে এক নামে কুরবানী
করিবার নিয়্যাত করিয়াছে। পরে উহাতে শরীকদার লইতে ইচ্ছা করিলে
দেখিতে হইবে, যে ব্যক্তি অংশীদার লইতে চাহিতেছে, সে মালদার, না কি
গরীব। মালদার হইলে অন্য অংশীদার লইতে পারিবে। আর যদি গরীব হয়,
তবে অংশীদার লইতে পারিবে না। কুরবানীর গরু, মহিষ ও উটে আকীকার
অংশ থাকিতে পারে।
কুরবানীর পশু সম্পর্কীয় মাসায়েল
কুরবানীর জন্য উট হইলে উহার বয়স পাঁচ বৎসর, গরু কিংবা মহিষ হইলে
দুই বৎসর আর ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা হইলে এক বৎসর হওয়া আবশ্যক।
তবে ভেড়া ও দুম্বা যদি এইরূপ মোটা তাজা হয় যে, এক বৎসরের বয়স্ক
বলিয়া মনে হয়, তাহা হইলে এক বছরের কিছু কম বয়সের হইলেও কুরবানী
দুরুস্ত হইবে। কিন্তু ছাগল যতই মোটা তাজা হউক এক বছরের একদিন কম
হইলেও কুরবানী দুরুস্ত হইবেনা।
গরু, মহিষ, উট, ছাগল, ভেড়া এবং দুম্বা এই কয়েক প্রকার ছাড়া অন্য
কোন পশু দ্বারা কুরবানী করা দুরুস্ত নয়।
মোটাতাজা পশু কুরবানী করা মুস্তাহাব। হাদীছ শরীফে আছেÑ যেই
পশুটি কুরবানী করিবে, উহাকে পূর্ব হইতে পালিয়া-পুষিয়া মোটাতাজা করিয়া
লইবে। কেননা, তাহা পুল্ছিরাতে তোমাদের সোয়ারীরূপে ব্যবহৃত হইবে।
আমানতের পশু, শরীকানা পশু, ঋণের পশু এবং বন্ধকী পশু দ্বারা কুরবানী
জায়েয নাই। দুর্বল গরু-ছাগল যাহার হাড়ে মজ্জা শুকাইয়া গিয়াছে বা যে
সকল গরু-ছাগল কুরবানীর জায়গা পর্যন্ত হাঁটিয়া যাইতে পারে না। এইরূপ
পশু দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়।
যেই পশুর একটি পা এইরূপ নষ্ট হইয়া গিয়াছে যে, উহা দ্বারা চলার সময়ে
কোন সাহায্য লওয়া যায় না, তাহা দ্বারা কুরবানী দুরুস্ত নয়।
যেই পশুর কান অথবা লেজের তিন-ভাগের একভাগ কাটা গিয়াছে, উহা
দ্বারাও কুরবানী শুদ্ধ হইবে না। পশুর শিং-এর গোড়া ভাঙ্গিয়া গেলে যদি
মগজে ক্ষতি পৌঁছে, তাহা হইলে কুরবানী দুরুস্ত হইবে না।
যেই পশুর কান একেবারে গজায় নাই, উহা দ্বারা কুরবানী দুরুস্ত হইবে
না। তবে শিং একেবারে না উঠিয়া থাকিলেও কুরবানী দুরুস্ত হইবে। দাঁত
মোটেও না উঠিলে কিংবা অর্ধেক দাঁত পড়িয়া গেলে কুরবানী দুরুস্ত হইবে
না।
গাভীন বলিয়া পরিচয় পাওয়া গেলেও উহা দ্বারা কুরবানী করা দুরুস্ত
আছে। তবে বাচ্চাটিকে জীবিত পাওয়া গেলে উহাকেও আল−াহর নামে যবেহ্
করিয়া দিবে।
যবেহ করিবার আগে যদি কুরবানীর পশু থেকে জীবিত বাচ্চা বাহির হইয়া
আসে তাহা হইলে বাচ্চাটি যবেহ করিয়া তাহার গোস্ত সদকা করিয়া দিবে।
আর কুরবানীর সময় অতিবাহিত হইয়া গেলে জীবিত অবস্থায় সদকা করিয়া
দিবে। আর নিজেরা যবেহ করিয়া উহা খাইয়া ফেলিলে তাহার মূল্য সদকা
করিয়া দিবে। এই বাচ্চা বড় করিয়া উহার দ্বারা কুরবানী দেওয়া দুরুস্ত নাই।
কুরবানীর পশু যবেহ্ করার ও উহার পেট কাটিবার পর যদি দেখা যায় যে,
পেটে মৃত পূর্ণাঙ্গ বাছুর রহিয়াছে, তবে পুনরায় উহাকে যবেহ্ করা
নি¯প্রয়োজন। মায়ের যবেহ্ দ্বারাই উহারও যবেহ্ হইয়া যাইবে। এইরূপ
বাছুরের গোশ্ত খাওয়া হালাল। তবে উহার গোশ্ত খাওয়াটা নির্ভর করে
ব্যক্তিগত রুচির উপর। কতক লোকের ধারণা যে, কুরবানীর পশুর পেটে মৃত্যু
বাচ্চা পাওয়া গেলে উহার কিছু গোশ্ত কুরবানীর পশুর গোশ্তের সহিত
মিলাইতে হইবে। না মিলাইলে কুরবানী শুদ্ধ হইবে না। ইহা তাহাদের অমূলক
ধারণা।
কুরবানীর নির্দিষ্ট সময়
যিল্হজ্জ মাসের ১০ তারিখ হইতে ১২ তারিখ সন্ধ্যার পূর্ব পর্যন্ত কুরবানী
করা যায়। তবে ১০ তারিখে করা উত্তম। ভালরূপে যবেহ্ হইতে না পারে এই
আশংকার কারণে রাত্রিকালে কুরবানী করা মাক্রূহ্। যেখানকার লোকদের
উপর ঈদের নামাজ পড়া ওয়াজিব, সেখানে ঈদের নামাজের পূর্বে কুরবানী
করা দুরুস্ত নয়। প্রকাশ থাকে যে, মানড়বতের কুরবানী কুরবানীর দিনগুলিতেই
আদায় করিতে হইবে।
আরও কতিপয় মাসায়েল
কুরবানীর নিয়্যাতে পশু খরিদ করিবার পর যদি উহা হারাইয়া বা চুরি হইয়া
যায় এবং উহার বদলে অন্য পশু μয় করিবার পর আগেরটিও পাওয়া যায়,
তাহা হইলে মালদার ব্যক্তি ঐ দুইটি পশুর যে কোনটি কুরবানী করিতে
পারিবে। তাহার জন্য উভয়টি কুরবানী করা জরুরী নহে। কিন্তু গরীব ব্যক্তির
উপর উভয়টিই কুরবানী করা ওয়াজিব।
কুরবানীর জন্য কোন পশু μয় করিবার পর যদি উহাতে এমন কোন খুঁত
বা দোষ ধরা পড়ে, যাহাতে কুরবানী দুরুস্ত হয় না। তাহা হইলে মালদার
লোকের অন্য পশু কুরবানী করিতে হইবে। সেই দোষযুক্ত পশু কুরবানী
করিলে তাহার জিম্মা হইতে ওয়াজিব আদায় হইবে না।
কোন এক ব্যক্তির উপর কুরবানী করা ওয়াজিব ছিল। সে নির্দিষ্ট সময়ের
মধ্যে কুরবানী করিলো না বা করিতে পারিলো না। এই অবস্থায় তাহার একটি
বক্রী অথবা ভেড়া অথবা দুম্বা অথবা উহার মূল্য ‘সদকা’ করিতে হইবে।
অন্যথায় গুনাহ্গার থাকিবে। আর যদি অবস্থা এমন হয় যে, কুরবানীর জন্য
কিনিয়াছিল, কিন্তু কোন কারণে সময়মত কুরবানী করিতে পারে নাই, তাহা
হইলে ঐ পশুটিই সদ্কা করিতে হইবে। মূল্য দিলে চলিবে না।
পশু যবেহ্ করিবার আদব
যবেহ্ করিবার জন্য পশুটিকে খুব যতেড়বর সহিত শোয়াইবে। সব বিষয়ে
প্রস্তুত হওয়ার আগে পশুকে শোয়াইয়া রাখিয়া কষ্ট দিবে না। খুব ধারাল অস্ত্র
দ্বারা যবেহ্ করিবে। ভোঁতা অর্থাৎ ধারহীন অস্ত্র দ্বারা যবেহ্ করিয়া পশুটিকে
কষ্ট দিবে না। পশুর সামনে অস্ত্রে ধার দিবে না। একটি পশুর সামনে আর
একটি পশু যবেহ্ করিবে না। পশুটি ঠান্ডা হইবার পূর্বে পায়ের চামড়া কাটা
কিংবা খাল খালানো নিষেধ। পশুর গলার চারটি রগের মধ্যে অন্ততঃ তিনটি রগ
কাটিতে হইবে, দুইটি কাটা না গেলে যবেহ্ শুদ্ধ হইবে না এবং পশু হালাল
হইবে না।
কুরবানীর পশু যবেহ্ করার সময়ে নিমড়বলিখিত দোয়া পড়িবেঃ
উচ্চারণÑ ইনড়বী ওয়াজ্জাহ্তু ওয়াজ্হিয়া লিল−াযী ফাতারছ ছামাওয়াতি
ওয়াল্র্আদা হানীফাও ওয়ামা আনা মিনাল্ মুশ্রিকীন। ইনড়বা ছলাতী ওয়ানুসুকী
ওয়া মাহ্ইয়া-য়া ওয়া-মামাতী লিল−াহি রব্বিল্ ‘আলামীন। লা
শারীকালাহু ওয়া-বিযা-লিকা ওমিরতু ওয়া-আনা মিনাল্ মুস্লিমীন। আল−াহুম্মা
মিন্কা ওয়ালাকা।
অর্থ ঃ আমি সবকিছু হইতে বিমুখ হইয়া আসমান-জমিনের সৃষ্টিকর্তা
আল−াহ্ তায়ালার দিকে আমার মুখ ফিরাইয়াছি (আকৃষ্ট হইয়াছি) এবং
গয়রুল−াহ্র অর্থাৎ দেব-দেবীর নামে যাহারা পশু বলি দেয়, আমি সেই
মুশ্রিকদের দলভুক্ত নহি। আমার নামাজ, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও
আমার মরণ সবকিছুই আল−াহ্ রব্বুল আ’লামীনের সন্তুষ্টির জন্যই। যাঁহার
কোনই শরীক নাই; এইরূপ করিবার জন্য আমি আদিষ্ট হইয়াছি এবং আমি
তাঁহার আদেশের সম্মুখে আত্মসমর্পনকারীদের অন্যতম। হে আল−াহ্ ! এই
পশু তোমারই দেওয়া। তোমারই আদেশে তোমারই সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ইহাকে
কুরবানী করিতেছি।
এই দো’য়ার পরক্ষণেই “বিস্মিল−াহি আল−াহু আক্বার” বলিয়া পশু যবেহ্
করিবে। যবেহ্ করা শেষ হইলে বলিবে-“হে আল−াহ্! অমুক অমুকের
(কুরবানীর অংশীদারগণের ও তাহাদের পিতার নাম বলিবে) পক্ষ হইতে তুমি
এই কুরবানী কবুল কর, যেমন কবুল করিয়াছিলে তোমার দোস্ত হযরত
ইব্রাহীম (আঃ) ও তোমার হাবীব হযরত মুহাম্মদ (ছঃ) -এর পক্ষ হইতে।
কুরবানীর গোশ্ত ও চামড়া সম্পর্কে
হুকুম
কুরবানীর গোশ্ত তিন ভাগ করিয়া এক ভাগ নিজেদের জন্য রাখিবে, এক
ভাগ আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে যাহারা কুরবানী করে নাই, তাহাদিগকে দিবে,
অবশিষ্ট এক ভাগ গরীব-মিসকীনদিগকে দান করিবে। এইভাবে ভাগ করা মুস্ত
াহাব। নিজের পরিবারে লোকসংখ্যা বেশী হইলে উক্ত নিয়মে ভাগ না করিলে
ক্ষতি নাই। শরীকদের কুরবানীর গোশ্ত দাঁড়ি পাল−া দ্বারা সমান সমান ভাগ
করিবে।
মানড়বতের কুরবানীর গোশ্ত নিজে খাইতে পারিবে না অথবা কোন মালদার
লোককেও দিতে পারিবে না।
কোন মৃত্যু ব্যক্তির নামে স্বেচ্ছায় কুরবানী করিলে সেই কুরবানীর গোশ্ত
নিজেরা খাইতে পারে। কিন্তু মৃত্যু ব্যক্তির অছিয়াত অনুযায়ী কুরবানী করিলে
উহার গোশ্ত সবটুকু গরীব-মিসকীনদের মধ্যে সদ্কা করা ওয়াজিব।
কুরবানীর গোশ্ত কিংবা চামড়া দ্বারা খালাসির মজুরী বা অন্য কোন
পারিশ্রমিক দেওয়া দুরুস্ত নয়। চামড়ার পয়সা মৃত্যু ব্যক্তির দাফন কাফনে
খরচ করাও জায়েয নাই।
কুরবানীর পশুর চামড়া বিμয় না করিয়া নিজে জায়নামাজ ইত্যাদি তৈরী
করিয়া কোন স্থায়ী কাজে ব্যবহার করিতে পারে। কিন্তু বিμয় করিলে
বিμয়লব্ধ সমস্ত পয়সা গরীব-মিছকীনদিগকে দেওয়া ওয়াজিব হইবে। কোনও
মালদারকে চামড়ার পয়সা দেওয়া দুরুস্ত নাই।
চামড়ার পয়সা সরাসরিভাবে মক্তব-মাদ্রাসা, মসজিদ কিংবা এই ধরনের
অন্য কোন কাজে ব্যয় করিলে শুদ্ধ হইবে না। অর্থাৎ কুরবানীর চামড়ার
পয়সা দ্বারা মক্তব, মাদ্রাসা, মসজিদ ইত্যাদি তৈরী করা, মাদ্রাসার শিক্ষকের
বা মসজিদের ইমাম বা মুয়াজ্জিনের বেতন দেওয়া দুরুস্ত নয়। তবে
এতীমখানার এতীমদের খোরপোষ, মাদ্রাসার গরীব তাল্বে-ইলেমদের
খোরপোষ ও বই-পুস্তক কেনার জন্য সরাসরি ঐ ইয়াতিম গরীব ছাত্রদের
হাতে হাতে চামড়ার পয়সা দেওয়া দুরুস্ত আছে।