রোজাদারের জন্য ছয়টি কাজ
রোজাদার ব্যক্তি যদি নিমড়বলিখিত ছয়টি বিষয়ে যতড়ববান থাকিতে পারে, তবে দার মেহেরবানীতে রোজার বরকত লাভ করিয়া দুইজাহানেই ধন্য ও সাফল্যমন্ডিত হইবে।
❑ দৃষ্টিসংযমÑ রোজাদার ব্যক্তি নিজ দৃষ্টির হেফাজত করিবে, অর্থাৎ শরীয়াত অনুমোদন করেনা, এইরূপ কোন কিছুর প্রতি দৃষ্টি আকৃষ্ট না হয়,
সেদিকে সতর্ক থাকিবে। যেই বস্তুর প্রতি দৃষ্টিপাত করিলে মানুষের মন আল−াহ্র দিক হইতে অন্যদিকে ঘুরিয়া যায়, সেইরূপ কোন কিছুর প্রতি নজর দেওয়া রোজাদারের পক্ষে অনুচিত।
❑ রোজাদার ব্যক্তি নিজের জিহ্বার হেফাজত করিবে অর্থাৎ মিথ্যা বলা, কুবাক্য উচ্চারণ করা, কাহারও গীবাত্ করা,অশ−ীল কথাবলা ও বেহুদা
বাক্যালাপ করা ইত্যাদি হইতে আত্মরক্ষা করিবে। কেননা, রোজা রাখিয়া জিহ্বাকে সংযত না করিলে রোজার বরকত নষ্ট হইয়া যায়।
কাহাকেও হেয় ঘৃণিত সাজানোর উদ্দেশ্যে গীবাত করা কবীরা গুনাহ্। কেহ্কে হ ইহাকে কবীরা গুনাহের মধ্যেও জঘন্য পর্যায়ের বলিয়া অভিমত
দিয়াছেন। হাদীস শরীফে ব্যভিচার হইতেও মারাত্মক গুনাহ্ বলিয়া উলে−খ করা হইয়াছে। আমাদের মাজ্হাব মতে অবশ্য ইহাতে রোজা ভঙ্গ হয় না, কিন্তু রোজা মাকরূহ্ এবং রোজার বরকত নষ্ট হইয়া যায় আর উহার ছাওয়াব কমিয়া যায়।
❑ হযরত রাসূলুল−াহ্ (ছঃ) বলেনÑ “কোন রোজাদার ব্যক্তির সহিত যদি কেহ ঝগড়া বাঁধাইতে চায়, তবে সে ঐ ব্যক্তিকে জানাইয়া দিবে আমি রোজা রাখিয়াছি। (অর্থাৎ অপর পক্ষের উস্কানি সত্ত্বেও সে ঝগড়ায় লিপ্ত না হইয়া নিজের রোজার মর্যাদা অক্ষুনড়ব রাখিবে); আর ঐ কথা বলিবার পরও যদি সেই ব্যক্তি নিবৃত্ত না হয়, তবে নিজের মনকে এই কথা বুঝাইবে যে, রোজাদার অবস্থায় তাহার নিজের কিছুতেই কলহে লিপ্ত হওয়া উচিত নয়।
❑ রোজাদার ব্যক্তি স্বীয় কর্ণের হেফাজত্ করিবে। যেই কথা বলা অন্যায় তাহা শোনাও অন্যায়। হাদীস শরীফে আছে, “যে গীবাত্ করে, আর যে শোনে উভয়ই গুনাহ্গার। সুতরাং কানের দ্বারা যাহাতে কোন অন্যায় কথা, গানÑবাজনার সুর ইত্যাদি শ্র“ত না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকিবে।
❑ দেহের অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলিকে যাবতীয় ধর্মবিরুদ্ধ কাজ হইতে বিরত রাখিবে। হাত দ্বারা অন্যায়ভাবে কোন কিছু স্পর্শ করিবে না, পায়ের সাহায্যে পাপের পথে যাতায়াত করিবে না ইত্যাদি।
❑ হালাল উপার্জনের জিনিস দ্বারা খানাÑপিনা করিবে। হাদীস শরীফে আছেÑ “হারামের মাল খানা পিনা করা আর কোন রোগীর বিষ মিশ্রিত ঔষধ সেবন করা একই রকম। ঔষধ রোগীর আরোগ্য লাভে সহায়ক হইলেও বিষ তাহার প্রাণসংহার করিবে। অন্য হাদীসে আছেÑ হারাম মালে যেই শরীর গঠন হইবে উহা জাহানড়বামের আগুনে প্রজ্বলিত হইবে।\
❑ ইফ্তার ও সেহ্রীতে পরিমাণমত ভোজন করিবে।
যেসমস্ত কাজে রোজার কাজা ও কাফ্ফারা উভয় আবশ্যক
১। নিয়্যাতের সহিত রোজা রাখিয়া বিনা ওজরে অর্থাৎ শরীয়াত সম্মত কারণ ছাড়া ইচ্ছাপূর্বক রোজা ভঙ্গ করিলে।
২। নিয়্যাতের সহিত রোজা রাখিয়া দিনের বেলায় স্বেচ্ছায় পায়খানার রাস্তায় বা যৌন পথে সহবাস করিলে।
কাফ্ফারার বর্ণনা
রমজান মাসের ফরজ রোজা বিনা ওজরে ভঙ্গ করার শাস্তি হইতেছে
❑ প্রথমত ঃ একটি μীতদাস অথবা μীতদাসীকে ‘আজাদ’ অর্থাৎ দাসত্ব শৃঙ্খল হইতে মুক্ত করা। আমাদের এতদ্দেশে দাসÑদাসী আজাদ করার উপায় নাই। সুতরাং নিমড়বলিখিত দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় হুকুম পালন করিতে হইবে।
❑ দ্বিতীয়ত ঃ একাধিকμমে দুইমাস রোজা রাখা। কাফ্ফারার রোজা রাখিতে আরম্ভ করিয়া মধ্যে ভাঙ্গা পড়িলে পুনরায় প্রথম হইতে রোজা আরম্ভ করিতে হইবে। এই মাস্য়ালা পুরুষদের জন্য।এই ব্যাপারে স্ত্রীলোকদের মাস্য়ালা হইল কোন স্ত্রীলোক বিনা ওজরে ইচ্ছাকৃত ফরজ রোজা ভঙ্গের কাফ্ফারা হিসাবে রোজা পালন আরম্ভ করিল। কিন্তু কয়েকদিন রোজা রাখার পর তাহার ‘হায়েজ’ (মাসিক ঋতুস্রাব) শুরুহইল। এই অবস্থায় হায়েজ হইতে পাক হওয়ার পর তাহার পুনরায় প্রথম হইতে রোজা রাখিতে হইবে না। বরং ষাটটি রোজা পুরা হইতে যে কয়টি বাকী ছিল, তাহাই রাখিবে। আর যদি কাফ্ফারার রোজার মাঝখানে নেফাস অর্থাৎ সন্তান প্রসব হয়, তবে সেই অবস্থা হইতে পাক হওয়ার পর পুনরায় প্রথম হইতে আরম্ভ করিয়া ষাটটি রোজা রাখিতে হইবে। রোগের ও সফরের কারণে যদি কাফ্ফারার রোজা ভঙ্গ করিতে হয় সুস্থ হওয়ার পর পুনরায় ষাটটি রোজা রাখিতে হইবে। যদি মাঝে রমজান মাস আসিয়া যায় তবে নতুনভাবে আবার ষাটটি রোজা রাখিতে হবে। [শামী]
❑ তৃতীয়ত ঃএকাধিকμমে দুই মাস রোজা রাখিতে অক্ষম হইলে, ষাট জন বালেগ মিস্কীনকে দুই বেলা পরিতৃপ্তিজনক আহার করাইতে হইবে। এই ষাট জন মিস্কীনের প্রত্যেকেই বালেগ হইতে হইবে। একজন মিস্কীনকে প্রত্যহ দুই বেলা করিয়া ষাট দিন খাওয়াইলেও দুরুস্ত হইবে।মিস্কীনকে নিজ বাড়ীতে না খাওয়াইয়া তাহাদের প্রত্যেককে সদকায়ে ফিত্র (রোজার ফিত্রা) পরিমাণ আটা বা গম বা উহার মূল্য দিলেও দুরুস্ত হইবে।
❑ একাধারে ষাট দিন আহার না করাইয়া বিচ্ছিনড়বভাবে আহার করাইলেও কাফ্ফারা আদায় হইবে। ষাট দিনের গম বা আটা অথবা এর মূল্য হিসাব করে যদি একই দিনে তা কোন এক মিস্কীনকে প্রদান করা হয় তবে তাতে একদিনের কাফ্ফারা আদায় হইবে বাকী ঊনষাট দিনের কাফ্ফারা পুনরায় আদায় করিতে হইবে।[শামী]
কোন মিসকীনকে সদ্কায়ে ফিতরের পরিমাণ হইতে কম প্রদান করিলে তাহাতে কাফফারা আদায় হইবে না। [বাহরুর রায়েক]
আবার একদিন একজন গরীবকে একটি রোজার বিনিময় হইতে অধিক দিলে তাহার হিসাব ধরা যাইবে না, মাত্র এক দিনেরই ধরা যাইবে।
প্রকাশ থাকে যে, একই রমজানের যেই কয়টিই শরয়ী ওজর ছাড়া রোজা ভাঙ্গা হোক না কেন উহার জন্য একটির কাফ্ফারাই ওয়াজিব হইবে। আর যেই কয়টি রোজা ভাঙ্গিয়াছে সেই কয়টি কাজা করিতে হইবে।
❑ রমজানের রোজা রাখিয়া যেই সব জিনিস মানুষের খাদ্যরূপে ব্যবহৃত হয় এবং যেই সব জিনিস ঔষধরূপে সেবন করা হয়, রোজাদার অবস্থায় শরয়ী ওজর ছাড়া উহাদের কোন কিছু ইচ্ছাকৃত খাইলে বা সহবাস করিলে রোজা নষ্ট হইয়া যায় এবং সেই রোজার কাজা ও কাফ্ফারা উভয়টা আদায় করা ওয়াজিব হয়। প্রকাশ থাকে যে, রমজান মাসের রোজা ব্যতিত অন্য কোন রোজা ভাঙ্গিবার কারণে কাফ্ফারা দিতে হয় না।
❑ যদি কেউ শিঙ্গা লাগায় আর ধারণা করে যে, তাহাতে রোজা ভঙ্গ হইয়া যায়, এরপর ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করিয়া ফেলিলে তাহা হইলে তাহার উপর কাজা ও কাফফরা দুটোই ওয়াজিব হইবে।
❑ গীবাত করিবার পর যদি ধারণা করিয়া থাকে যে, তাহাতে রোজা ভঙ্গ হইয়া যায় এরপর ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করিয়া বসে তাহা হইলে
যেইভাবেই করিয়া থাকুক তাহার উপর কাজা ও কাফফারা উভয়টিই ওয়াজিব হইবে।
❑ যদি কেহ সুরমা অথবা তেল লাগাইয়া অজ্ঞাতবশতঃ মনে করে যে,তাহার রোজা ভাঙ্গিয়া গিয়াছে এবং এই কারণে ইচ্ছা করিয়া কিছু
খাওয়াÑদাওয়া করে, তবে কাজা ও কাফ্ফারা উভয়ই ওয়াজিব হইবে।
❑ সাহরী লোকমা মুখে রহিয়া গেল এবং ফজর উদিত হওয়ার পর তা গলধঃকরণ করিলে তার রোজা ভঙ্গ হইবে ও কাজা ওয়াজিব হইবে, আর যদি মুখ থেকে বের করিয়া পুনঃ খায় তাহা হইলে কাজা কাফ্ফারা উভয়ই ওয়াজিব হইবে।
❑ প্রিয় ব্যক্তির থুথু গলধঃ করণ করিলে কাজা ও কাফ্ফারা উভয়ই ওয়াজিব হইবে। কেননা উহাতে খাদ্যের স্বাদ অনুভূত হইয়া থাকে।
❑ বাড়ীতে অবস্থানকালে রোজা রাখিবার পর রোজা ভঙ্গ করিয়া সফর আরম্ভ করিলে কাজা ও কাফ্ফারা উভয়ই ওয়াজিব হইবে।
❑ রমজান মাসে রোজাদার অবস্থায় সফরে বাহির হইবার পর কোন প্রয়োজনে বাড়িতে প্রত্যাবর্তন করিয়া দিনের বেলা শরয়ী ওজর ছাড়া পানাহার করিলে (রোজা ভঙ্গ করিলে) কাফ্ফারা ওয়াজিব হইবে।
❑ রোজা রাখিবার পর হায়েজ আসিবে ধারণায় কোন মহিলা যদি রোজা ভাঙ্গিয়া ফেলিল, কিন্তু পরে তাহার হায়েজও আসিলনা তাহা হইলে তাহার উপর কাজা ও কাফ্ফারা ওয়াজিব হইবে।