কনস্টান্টিনপোল বিজয়ের পর ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে আমীরুল মু’মেনীন সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহ  নগরীর নাম রাখেন ইসলামপোল। কালের আবর্তনে নাম বিকৃত হয়ে এ নামটিই আজকের ইস্তামবুল।
সেই মহান বিজয়ের প্রধান সিম্বল হিসেবে আজও স্বগর্বে দাড়িয়ে আছে ঐতিহাসি আয়াসোফিয়া মাসজীদ। ১৯৩৬ সালে ধর্মহীন সেক্যুলার যুগে কুখ্যাত নাস্তিক কামাল পাশার সৈরাচারি হুকুমে হাতে এটি মিউজিয়াম বানানো হয়। গত ১০ই জুলাই তুরষ্কের আদালত কামাল পাশার ডিক্রিকে অবৈধ ঘোষনা করে পূণরায় মাসজীদ করার পক্ষে ঐতিহাসিক রায় দেয়।ফলশ্রুতিতে সারা বিশ্বের মুসলিমদের হৃদয়ে প্রশান্তির ছায়া নেমে আসে। নেট জুড়ে ভাসছে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের জন্য সারাবিশ্বে লক্ষ লক্ষ মুসলিমের দোয়া সম্বলিত বার্তা। অনেকে নফল সালাত আদায়ের মাধ্যমে শুকুরিয়া জ্ঞাপন করছে।
কিন্তু নেটে কিছু ডিজিটাল মুফতি / সেক্যুলারদের মায়াকান্না দেখে তাদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা –
যারা ডিজিটাল মুফতি/স্যেকুলার ইতিহাসবিদ তারা জানেনা বা বলেননা আয়াসোফিয়া কেবল মাত্র একটি গীর্জা নয় বরং তদানিন্তন খ্রিস্টানরা এখানে গীর্জার আড়ালে ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আসছিল। এবং তাদের সুদূর পরিকল্পনা ছিল এটাকে ব্যবহার করে ইসলামি সম্রাজ্যের বিরুদ্ধে খ্রিষ্টানদের লেলিয়ে দিবে। তাই আয়া সোফিয়াকে মাসজীদে রুপান্তরের মাধ্যমে ওদের ষড়যন্ত্রের আতুরঘরকে মাটি দিয়েছিলেন মহান নেতা আমীরুল মু’মিনীন মুহাম্মাদ আল-ফাতিহ।
মুসলিমদের বিজিত অঞ্চল হিসেবে পারিপার্শিক বিবেচনায় আয়াসোফিয়াকে মাসজীদ করা সম্পূর্ণ ইসলাম সম্মত ছিল কিন্তু তার পরেও অধিক সতর্কতা বষত তৎকালীন বিজিত বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের ধর্মীয় নেতাদের কাছ থেকে নগদ টাকার বিনিময়ে কিনে নিয়েছিলেন বিজয়ী সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতেহ। প্রায় ছয়শ বছর ধরে সুলতানের খরিদা ও ওয়াকফকৃত এ মসজিদ মসজিদই আছে। এটা কোনো গীর্জা নয়।
তিনি যথেষ্ট বৈধতা এবং যৌক্তিক বহু কারণ থাকা সত্বেও গির্জাকে মসজিদে রূপান্তরিত করেননি বরং যায়গা ও ভবন খরিদ করে তা মাসজীদে রূপ দিয়েছেন।মিনার সংযুক্ত করেছেন।
এবার আসি যারা একটি ঘটনাকে দলীল হিসেবে পেশ করেন যে, ফিলিস্তিন বিজয়ের পরে হযরত ওমর রাঃ পাদ্রীদের আহবানের পরেও গীর্জার ভিতরে নামাজ পরেননি। যাতে পরবর্তিতে এটা নিয়ে দন্দ তৈরি না হয়।
এক্ষেত্রে আমরা বলবো ওমর রাঃ এর ঐ ঘটনাটি যেখানে ঘটেছে সেখানে বিনা যুদ্ধে তারা অঞ্চল হস্তান্তর করে মুসলিম সম্রাজ্যের মধ্যে এসেছিল এবং ঐ গীর্জা ইসলামের বিরুদ্ধে মূল কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহুত হতোনা।
অপরদিকে কনষ্টান্টিনোপল জয় করার জন্য সাহাবা রাঃ গণের যুগথেকে শুরুকরে সুলতান মুহাম্মাদ আল-ফাতিহ পর্যন্ত সহস্র শহীদ তাজা রক্ত ঝড়িয়েছে।
এবং আয়াসোফিয়া থেকে ইসলামি সম্রাজ্য ও মুসলিম উম্মাহ’র বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলতো রুটিন কাজ হিসেবে কাজেই হযরত ওমর রাঃ এর ঘটনা প্রেক্ষাপট আর আয়াসফিয়ার প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন ফতোয়াও ভিন্ন।
আয়া সোফিয়াকে মাসজীদে রূপান্তর করার বিপক্ষে তদানিন্তন কিংবা তার পরে কোনো গ্রহণ যোগ্য আলেম ফতোয়া দেয়নি।
যদিও বর্তমান সৌদির কিছু পেইড মুফতি ও তাদের অন্ধ পুজারিরা ডিজিটাল ফতোয়া দিয়ে মাসজীদকে যাদুঘর রাখার স্বপ্ন দেখেছিলেন।
কিন্তু আমি কেবল কুর আনের সেই আয়াতকে স্মরণ করবো-
وَمَكَرُواْ وَمَكَرَ ٱللَّهُۖ وَٱللَّهُ خَيۡرُ ٱلۡمَٰكِرِينَ
এবং কাফেরেরা চক্রান্ত করেছে আর আল্লাহও কৌশল অবলম্বন করেছেন। বস্তুতঃ আল্লাহ হচ্ছেন সর্বোত্তম কুশলী। -Sura Aal-E-Imran, Ayah 54
১৯৩৫ সালে ধর্মহীন সেক্যুলার যুগে কুখ্যাত নাস্তিক কামাল পাশার সৈরাচারি হুকুমে এটিকে মিউজিয়াম বানানো হয়। প্রায় ৮৬ বছর পর সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতেহ’র গির্জা ক্রয় ও মসজিদের জন্য ওয়াকফের দলিল দেখে তুরস্কের আদালত মিউজিয়ামটি আবার মসজিদ হিসেবে চালু করার পক্ষে রায় দেন। কাজেই মাসজীদ তার আসলরূপে ফিরেছে।
এখন যারা এ বিষয়ে চেঁচামেচি করছে, তাদেরকে বলি, ৮০০ বছর শাসনের পর প্রতারণা ও অত্যাচার করে স্পেন থেকে যারা মুসলমানদের বের করে ছেড়েছ, তোমরা গ্রানাডা, কর্ডোভা, মাদ্রিদ, টলেডো, ইশবেলিয়ার মসজিদগুলো কেন গুদামঘর, আস্তাবল, মিউজিয়াম বানিয়ে রেখেছ? ইতালির সিসিলি আজও বহু মাসজীদকে গীর্জা বানিয়ে রেখেছে কিংবা তালাবন্ধ করে রেখেছে!
 ভারতের ৫০০ বছর আগের বাবরী মসজিদসহ শত শত মসজিদ কেন ভাঙা হয়েছে? এসবের ব্যাপারে তোমরা মুখে কুলুপ এটেছ কেন? সামান্য কিছু বলো! তোমাদের  সব চেঁচামেচি শুধু মুসলমানদের জন্য তুলে রাখ কেন?
নিজের কেনা গির্জার ভবনকে সংস্কার করে কেন মসজিদ মাদরাসা তৈরি করা যাবে না, এমন বিধান কোথায় তোমরা পেয়েছ? সব মানুষ অন্যায়-অবিচার করেও এত ভালো, আর মুসলমান তার ন্যায্য অধিকার দাবি করলেও এরা ‘ভালা’ না! আর যারা দলীল ভুয়া বলতে চাও, তারা সত্যবাদি হলে, জরুরী প্রমাণাদি হাতে নিয়ে তুরস্কের উচ্চ আদালতে রিট করতে যাও।
   মাওলানা তানভীর হাসান
পরিচালকঃ হযরত হাতেম আলী রহঃ ফাউন্ডেশন