Tuesday, September 17, 2024
Home Blog

কুরবানী কার উপরে ওয়াজিব

0

কোরবানী কার উপর ওয়াজিব?

কোরবানী কার উপর ওয়াজিব?

কোরবানী ওয়াজিব হওয়ার জন্য পুরুষ হওয়া কি শর্ত?

কুরবানী একটি ইসলামী ধর্মীয় প্রথা যা ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে পালন করা হয়। এই প্রথায়, মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানি করে থাকেন। সাধারণত ভেড়া, গরু, ছাগল, মহিষ ইত্যাদি পশু কুরবানি করা হয়। কুরবানী করা পশুর মাংস তিন ভাগে ভাগ করা হয়: এক ভাগ নিজের জন্য, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনের জন্য এবং এক ভাগ গরীব ও দরিদ্রদের মাঝে বিতরণের জন্য।

কুরবানীর প্রথা ইব্রাহীম (আঃ) ও তার পুত্র ইসমাইল (আঃ)-এর কাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ত। কুরআন অনুযায়ী, আল্লাহর নির্দেশে ইব্রাহীম (আঃ) তার পুত্র ইসমাইল (আঃ)-কে কুরবানি করতে প্রস্তুত হয়েছিলেন, কিন্তু আল্লাহর করুণায় ইসমাইল (আঃ)-এর পরিবর্তে একটি পশু কুরবানি করা হয়। এ ঘটনার স্মরণে মুসলিমরা কুরবানী করে থাকি।

রোজা ও আধুনিক বিজ্ঞান

0
ramadan

রোজা ও আধুনিক বিজ্ঞান
হাফজ ডা: মো: আনোয়ার হোসেন

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা, যার প্রতিটি বিধান মানবজাতির জন্য কল্যাণকর। রোজা হল ইসলামের একটি মৌলিক ভিত্তি। রোজা শুধু আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধতা অর্জুনের জন্য উপকারিতা নয় বরং বিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। চিকিৎসা বিজ্ঞান রোজার ব্যবহারিক তাৎপর্য উপলব্ধি করে তার সত্যতা প্রমাণ করেছে।

প্রতিনিয়ত আমাদের শরীরের বিভিন্ন কোষ মরে যায়, মৃত্যু এই কোষগুলো কোষের অভ্যন্তরে লাইসোজোম নামের একটি বিশেষ অঙ্গে জমা হতে থাকে। একইভাবে জমা হয় মৃত্যু ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস। রোজার সময় খাবার গ্রহণ নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বন্ধ থাকে এ সময় শরীরের কোষগুলো বাহির থেকে কোন খাবার না পেয়ে নিজেই নিজের ক্ষয়প্রাপ্ত এবং দুর্বল কোষগুলো খেয়ে ফেলে। এই প্রক্রিয়াটা যখন ২৫ -২৮ দিন চলতে থাকে এবং ক্ষয় প্রাপ্ত ও কার্যক্ষম নয় এমন কোষগুলো রিপেয়ার হয়ে যায়। যার ফলে শরীরের বর্জ্য ব্যবহৃত হয়ে শরীরকে করে দূষণমুক্ত। শরীরের এই প্রক্রিয়াকে বলে অটোফেজি।
এছাড়াও রোজা রাখার মাধ্যমে খুব সহজেই অটোফেজি হয় যেখানে তৈরি হয় নাইট্রিক অক্সাইড যেটি দেহকোষকে পুনর্জীবিত করে বাড়িয়ে দেয় কোষের আয়ু এবং এটি এন্টি এজিং বা বার্ধক্যরোধক হিসেবে কাজ করে।

বিখ্যাত জার্মান গবেষক ও বিজ্ঞানী ওশিনরি ওসুমি ( Yoshinori ohsumi) তার বিখ্যাত অটোফেজির তথ্য দিয়ে ২০১৬ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান।
তিনি বলেন মুসলমান যেটাকে রোজা বলে আমি সেটাকে বলি অটোফেজি।

দীর্ঘদিন একইভাবে প্রয়োজনীয় খাদ্য গ্রহণ করলে শরীরে তা অতিরিক্ত মেদ হিসাবে জমা থাকে। সেই সঙ্গে বাড়ে ক্ষতিকারক টক্সিন এর মাত্রাও। রোজা বা উপবাস করলে শরীরের মধ্যকার শর্করা প্রোটিন ও চর্বিতীয় পদার্থ গুলো পাচিত হয় ফলে কোষ গুলোর কোন ক্ষতি না হয়ে বরং পুষ্টি বিধান হয়। এছাড়া এ সময় পাকস্থলী, অন্তনালী যকৃত সহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিশ্রাম পায়।

ক্যালোরি রেস্ট্রিকশন এর উপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, রোজা বা উপবাসের মাধ্যমে দিনের গৃহীত ক্যালরির পরিমাণ কমিয়ে আনলে তার শারীরিক স্থায়িত্ব বাড়ায় এবং বেশ কিছু জটিল অসুখের ফলে সৃষ্ট জটিলতা কমিয়ে আনে। রোজা রাখলে খারাপ কোলেস্টেরল LDL বাড়ে ৮% ট্রাই এসাইল গ্লিসারল (TG) বাড়ে ৩০% এবং ভালো কোলেস্টেরল
অর্থাৎ HDL বাড়ে ১৪.৩%। ফলে হার্ট অ্যাটাক এর ঝুঁকি কমায় এছাড়াও ঝুঁকি কমায় রক্তনালীতে চর্বি জমে সৃষ্ট অ্যথোরোসক্লেরোসিস, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ সহ অন্যান্য নিউরো ডিজেনারেটিভ ডিসঅর্ডার।

রোজার মাধ্যমে মস্তিষ্কের সেরিবেলাম ও লিম্বিক সিস্টেম এর উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ায় অর্থাৎ রোজা শারীরিক সক্ষমতা তৈরীর পাশাপাশি এনে দেয় মানসিক প্রশান্তিও। এটার মূল কারণ হলো ব্রেন থেকে নিঃসৃত পদার্থ BDNF (Brain-derived neurotrophic factors) পাশাপাশি মনস্তাত্ত্বিক ও মানসিক রোগ দূর করে দেয়।

আমরা অনেকেই মনে করি রোজা রাখলে পেপটিক আলসার বেড়ে যায় এটা সম্পূর্ণ ভুল বরং পেকটিক আলসার রোজার কারণে তাড়াতাড়ি ভালো হয়। রোজার কারণে পাকস্থলী খাদ্য মুক্ত থাকে এ সময় তার ক্ষয় পূরণ ও পুনর্গঠণের কাজ শুরু হয়। নিয়মিত পেট খালি রাখলে ও নিয়মিত আহার করলে পাকস্থলীতে এমন এক পরিবেশের সৃষ্টি হয় যাতে পাকস্থলী আলসার বা ক্ষত শুকাতে সহায়ক হয়। দেখা যায় রুগ্ন মানুষটি উপবাস থাকছে না উপবাস থাকছে রোগটি।
ডাক্তার ব্লিভ তার পেপটিক আলসার নামক গবেষণামূলক বইয়ে উল্লেখ করেন- মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় পেপটিক আলসার নামক রোগের প্রকোপ অনেক কম। কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন দীর্ঘ এক মাসের রোজাকে।

আমরা অনেকেই মনে করি রোজা রাখার ফলে শরীর অনেক ধরনের ক্ষতি হয় যেমন ওজন কমে যায়, দুর্বলতা বৃদ্ধি পায় ইত্যাদি।
কায়রো থেকে প্রকাশিত Science calls for fasting গ্রন্হে পাওয়া যায় – The power of endurance fasting condition are remarkable. after a fast properly taken the body is literly born a fresh
অর্থাৎ রোজা রাখা অবস্থায় শরীরের ক্ষমতা ও সহ্য শক্তি উল্লেখযোগ্য, সঠিকভাবে রোজা পালনের পর শরীর প্রকৃত পক্ষে নতুন সজীবতা লাভ করে

রোজার মাধ্যমে খাদ্য গ্রহণ না করায় আলফা-১ ও গামা নামক প্রোটিন বৃদ্ধি পায়। এগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

রোজা ওজন কমাতে সাহায্য করে। শরীরে যাদের বাড়তি ওজন, তারা এই সময়ে বিশেষভাবে উপকৃত হয়ে থাকেন। যেহেতু রমজানুল মোবারকের পুরো মাসজুড়ে রোজাদার ব্যক্তিগণ খাদ্যাভ্যাসে নির্দিষ্ট নিয়ম এবং রুটিন মেনে চলে।

রমজানে রোজা রাখার অন্যতম সুবিধা হলো এটি রক্তে শর্করাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। রোজা গ্লুকোজকে ভেঙে দেয়, যাতে শরীর শক্তি পেতে পারে যা ইনসুলিনের উৎপাদন হ্রাস করে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। রোজার সময় বিপাকের হারও হ্রাস পায়। অ্যাড্রিনালিন এবং ননঅ্যাড্রিনালিন হরমোনগুলির ক্ষরণও হ্রাস পায়; এটি বিপাকের হারকে স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করে, যার ফলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করার পাশাপাশি আত্মনিয়ন্ত্রনের মানসিকতার শিক্ষা দেয় পবিত্র মাহে রমজান। রমজানের সময় রোজার এটি অন্যতম বিশেষ একটি শিক্ষা- আপনার শরীরের চাহিদা এবং আকাঙ্ক্ষা থাকা সত্বেও খাদ্য এবং পানীয় না দিয়ে কীভাবে মনের এই চাহিদাকে নিয়ন্ত্রণ করবেন তা শেখার জন্য প্রস্তুত করে। এই প্রক্রিয়াতে, মস্তিষ্ক সেই অবস্থার সাথে মানিয়ে নেয় এবং কীভাবে আরও ধৈর্যশীল হতে হয় তা শেখায়।

Stamford University ‘ র একটি গবেষণায় দেখা গেছে যেখানে ১৫৪৮ জন ছাত্রছাত্রীর উপর ৯০ বছর পর্যবেক্ষণ করা হয়- তিনটি কাজ করলে মানুষ বেশি দিন বাঁচতে পারে এবং ভালো করে বাঁচে। সেই তিনটি কাজেই রোজার সাথে সম্পর্কিত আর তা হল –
Social activity ( সামাজিক কার্যক্রম)
Spirituality ( আধ্যাত্মিকতা)
Prayer ( প্রার্থনা)

রাশিয়ার একটি গবেষণায় দেখা গেছে তিনটি কাজ করলে শরীরের বিষাক্ত দ্রব্যাদি বের করে হয়ে যায়, এবং বার্ধক্যকে থামিয়ে দেয়। আর তা হল –
– অধিক পরিশ্রম করা
– অধিক পরিমাণে ব্যায়াম করা
– প্রত্যেক মাসে একদিন উপবাস থাকা

খ্যাতনামা টিভি জার্নালিস্ট মাইকেল মজলি যিনি স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ক ডকুমেন্টারির একজন জনপ্রিয় উপস্থাপক তিনি একটি গবেষণায় দেখেছেন- রোজা বা উপবাসে পোস্টের সহ অন্যান্য ক্যান্সারের ঝুঁকি ৫০%কমায়। ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানোর পাশাপাশি বাড়ায় ক্যান্সার রোগীর প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষের বৃদ্ধিকে প্রতিহত করে।

ইসলাম ব্যতীত অন্যান্য ধর্মেও বিভিন্ন ধরনের উপবাস থাকার ধর্মীয় রীতির প্রচলন রয়েছে যেমন খ্রিস্টানদের ক্যালরী রেস্ট্রিক্টেড ফাস্টিং ( দৈনন্দিন গৃহীত খাবারের ৪০ শতাংশ কমিয়ে আনা হয়) অল্টারনেট ডে ফাস্টিং (একদিন পরপর ২৪ ঘন্টার জন্য পানি ব্যতীত সকল ধরনের খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হয়)। অথচ ইসলাম হাজার বছর ধরে রোজা পালিত হয়ে আসছে। রোজা আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধতার পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটায়। আসুন আমরা সবাই রোজা পালন করি এবং মুক্তির পথ সহজ করি। আমিন।

লেখক: রেসিডেন্স ( জেনারেল সার্জারী বিভাগ)
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

এক নজরে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ৬৩ বছরের জিন্দেগী

0
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ৬৩ বছরের জিন্দেগী
এক নজরে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ৬৩ বছরের জিন্দেগী

সংকলনঃ মাওলানা মুহাম্মাদ তানভীর হাসান আল-মাহমুদ

পরিচালক-কার্য নির্বাহী পরিষদঃ হযরত হাতেম আলী রহঃ ফাউন্ডেশন (HARF

নবুওয়াত পূর্ব মক্কী জীবনঃ
মিলাদুন নবীঃ
অধিকাংশ ঐতিহাসিকদের মতে আ’মুল ফীল বা হাতির বছর ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ২০ শে এপ্রিল রবিউল আউয়ালের ১২ তারিখ সোমবার সুবহে সাদেকের সময় রাসূল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্ম গ্রহণ করেন।

নবীজী ভূমিষ্ট হওয়ার পূর্বেই তাঁর পিতা খাজা আব্দুল্লাহ তাঁকে গর্ভাবস্থায় রেখে মাদীনায় ইন্তেকাল করেন।

দুগ্ধপান: নবীজী মাত্র সাতদিন আম্মাজান আমিনার দুগ্ধপান করেন। তারপর আবু লাহাবের দাসী সুমাইয়া আটদিন দুধ পান করান। এরপর খাওলা বিনতে মুনজির তাকে দুগ্ধ পান করান। এরপর হালিমায়ে সাদিয়া দীর্ঘদিন তাকে দুধ পান করান এবং তিনি ছাড়াও আতেকা নামী মহিলা ছাড়াও  তিন জন তাকে দুধ পান করান।””””””

মা ও দাদার মৃত্যুঃ শিশু মুহাম্মাদ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ৬ বছর বয়সে  আম্মাজান আমিনা আযওয়া নামক স্থানে ইন্তেকাল করেন এবং  ৮ বছর ২ মাস ১০ দিন বয়সে তার দাদাজান ইন্তেকাল করেন ।

দাদাজান আব্দুল মুত্তালিবের পর বালক মুহাম্মাদ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাচা আবু তালিবের কাছে লালিত পালিত হতে থাকেন।

নবীজীর সীনা চাক: বনূ সা’দ গোত্রে থাকা অবস্থায় একদা দু’জন ফিরিশতা শিশু মুহাম্মাদ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলেন। তারা তাঁর পেট চিরে তাঁর হৃদপিণ্ড থেকে কালো এক টকুরো রক্তপিণ্ড বের করে ফেলে দিলেন। এভাবে চার বার তাঁর সীনা চাক করা হয়। প্রথম বার ০৪ বছর বয়সে ২য় বার ১০ বছর বয়সে, ৩য় বার ৪০ বছর বয়সে, ৪র্থ বার ৫১ বছর বয়সে তাঁর সীনা চাক করা হয়।

প্রথম বিদেশ সফরঃ
কিশোর মুহাম্মাদ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম ১২ বছর বয়সে চাচা আবু তালেবের সঙ্গে সিরিয়ার উদ্দেশ্যে প্রথম ভ্রমণ করেন।

হিলফুল ফুযূল গঠন:
কিশোর মুহাম্মাদ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বয়স যখন ১৫-১৬ কিংবা আরো কম তখন চাচা যুবাইর ও কয়েকজন যুবককে সঙ্গে নিয়ে অসহায় মজলুম মানুষের সাহায্যার্থে এবং গোত্রে গোত্রে যুদ্ধ বন্ধ ও  ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠার দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে ‘হিলফুল ফুযূল’ নামক একটি সমাজ সেবামূলক সংগঠন গড়ে তুলেন।

যে সংগঠনের মাধ্যমে নিপিড়িত মাজলুমদের পাশে দাঁড়ানো, গোত্রের সাথে অন্য গোত্রের সংঘাত রোধকরে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভুমিকা রাখা সহ সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো।

ব্যবসাঃ

তাঁর বয়স মোবারক যখন ২৪ বছর শেষ প্রায় তখন চাচা আবু তালেবের পরামর্শে মক্কার সম্ভ্রান্ত রমনি খাদিজা বিনতে খুয়াইলিদের বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার উদ্দেশ্যে সিরিয়ায় ২য় বার ভ্রমণ করেন।

খাদিজার সঙ্গে বিবাহ:
যুবক মুহাম্মাদ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদিজাতুল কুবরার পুঁজি নিয়ে যখন সিরিয়ায় ব্যবসায় যান তখন তাঁর সত্যবাদিতা ও চারিত্রিক গুণাবলী দেখে সতী-সাধ্বী ও বিদুষী রমনি খাদিজা বিবাহের প্রস্তাব দেন। সে মতে মুহাম্মাদ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রস্তাবে সম্মতি দিয়ে তাঁকে বিবাহ করেন। বিবাহের সময় খাদিজা রাঃ এর বয়স ছিল ৪০ বছর। আর মুহাম্মাদ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বয়স ছিল ২৫ বছর।

কা’বা পূণনির্মাণে অংশ গ্রহণ ও ন্যায় বিচারঃ
যুবক মুহাম্মাদ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বয়স যখন ৩৫ বছর তখন কুরায়েশরা কা’বা মেরামতের উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং এক পর্যায়ে কাজ শুরু করে দেয়। যুবক মুহাম্মাদ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও অংশ নেন।
তখন কা’বা ঘরটি নানা কারণে দিন দিন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলো। তাই ঘরটি সংস্কারের জন্য আরবরা সম্মিলিত ভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করে। কেউ যাতে বঞ্চিত না হয়, সেজন্যে আরবদের বিভিন্ন গোত্রের লোকেরা কা’বা-ঘরের বিভিন্ন অংশ ভাগ করে নিলো। কিন্তু কা’বা ঘরের দেয়ালে যখন ‘হাজরে আসওয়াদ’ (পবিত্র কালো পাথর) বসানোর সময় এলো, তখন বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে তুমুল ঝগড়া বেঁধে গেলো। অবস্থা এতদূর পর্যন্ত গড়ালো যে, অনেকের তলোয়ার পর্যন্ত কোষমুক্ত হলো। চারদিন পর্যন্ত এ ঝগড়া চলতে থাকলো। পঞ্চম দিনে আবু উমাইয়া বিন মুগীরা প্রস্তাব করেন যে, আগামীকাল সকালে যে ব্যক্তি কা’বা-ঘরে সবার আগে হাজির হবে, এর মীমাংসার দায়িত্ব তাকেই দেয়া হবে। সে যা সিদ্ধান্ত দিবে, তা-ই পালন করা হবে। সবাই এ প্রস্তাব মেনে নিলো। পরদিন সকালে যার আগমন ঘটলো তিনি ছিলেন মুহাম্মাদ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের। ফয়সালা অনুযায়ী তিনি ‘হাজরে আসওয়াদ’ স্থাপন করতে ইচ্ছুক প্রতিটি গোত্রের একজন করে প্রতিনিধি নিয়োগ করতে বললেন। অতঃপর একটি চাদর বিছিয়ে তিনি নিজ হাতে পাথরটিকে তার ওপর রাখলেন এবং বিভিন্ন গোত্রের প্রতিনিধিগণকে চাদরের প্রান্ত ধরে পাথরটিকে ওপরে তুলতে বললেন। চাদরটি তার নির্দিষ্ট স্থান বরাবর পৌঁছলে তিনি পাথরটিপকে যথা স্থানে নিজ হাতে স্থাপন করলেন। এতে সবাই খুশী হলেন এবং আসন্ন যুদ্ধের মহা বিপর্যয় থেকে জাতীকে রক্ষা করলেন। তিনি পরিচিতি লাভ করলেন ন্যায় বিচারক হিসেবে।

নবুয়্যত লাভ:

মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সঃ ৪০ বছর বয়সে নবুয়্যত লাভ করেন।

নবুওয়াতের পরবর্তী মক্কী জীবন:
নবুওয়াতের ১ম বছর:
নবুয়্যতের প্রথম বছরে রাসূল সঃ এর উপরে ১। কুরআন নাযিলের সূচনা হয়।  ২। পবিত্রতা ও অযুর হুকুম অবতীর্ণ হয়।   ৩। হযরত ফাতেমা (রা.)-এর জন্ম হয়। এছাড়াও ৪। হযরত খাদিজা (রা.)-এর ইসলাম গ্রহণ। ৫। ওয়ারাকা ইবনে নওফেল রাসূল সঃ কে অনাগত দিন সমুহের কঠিন বাস্তবতার ভবিষ্যতবাণী করেন।

নবুওয়াতের ২য় বছর:
নবুয়্যতের দ্বিতীয় বছরে ১। হযরত আবু বকর, হযরত আলী, ও হযরত যায়েদ (রা.) ইসলামে দীক্ষিত হন। ৪। আরো কতিপয় সম্ভ্রান্ত কুরায়েশ ইসলাম গ্রহণ করেন।

নবুওয়াতের ৩য় বছর:
নবুয়্যতের তৃতীয় বছরে ১। রাসূল সঃ এর প্রতি প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচারের নির্দেশ আসে। ২।  যার ফলে রাসূলুল্লাহ সঃ সাফা পাহাড়ের চূড়ায় উঠে মক্কাবাসীকে প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়ার প্রদান করেন।

নবুওয়াতের ৪র্থ বছর:
নবুয়্যতের চতুর্থ বছরে ১। মুশরিকদের শত্রুতা চরম আকার ধারণ করে। ২। ৪। মুসলমানদের উপর চরম নির্যাতন চালানো শুরু করে । একই সাথে ৩। আবু তালেবের সাথে কুরায়ে নেতৃবৃন্দ  বৈঠক করে নবীজীকে ইসলামের দাওয়াত ছেড়ে দেয়ার বিনিময়ে নেতৃত্ব,নারী ও সম্পদের লোভনীয় প্রস্তাব পেশ করে। কিন্তু নবীজীর সঃ দৃঢ়তার সাথে তা প্রত্যাখ্যান করেন।

নবুওয়াতের ৫ম বছর:
নবুয়্যতের পঞ্চম বছরে ১। মুসলমানদের উপর কাফেরদের অত্যাচার আরো বৃদ্ধি পায়। ২। ফলে একদল মুসলিম রাসূল সঃ এর নির্দেশে হাবশায় প্রথম হিজরত করেন।

নবুওয়াতের ৬ষ্ঠ বছর:

নবুয়্যতের ষষ্ঠ বছরের উল্লেখ যোগ্য ঘঠনা হলো  হযরত হামজা ও হযরত ওমরের ইসলাম গ্রহণ।

নবুওয়াতের ৭ম,৮ম ও ৯ম বছর:  

এ তিন বছরের উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো ১। হাবশায় ২য়বার হিজরত। ২। রাসূলুল্লাহ সঃ ও তার সাহাবাদের কোনোভাবেই ইসলাম থেকে ফিরাতে না পেরে মুসলিমদের উপরে অবরোধ আরোপ করে  শি’আবে আবি তালেবে মুসলিমদের বন্ধি রাখে । মুসলিমদেরকে সামাজিক বয়কটের পাশাপাশি তাদের সকল মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয়। এমকি মুসলিমদের কাছে নিত্যপ্রয়োজনিয় মালামাল বিক্রির উপরেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে । ৩। এসময়ের ভিতরে রাসূলুল্লাহ সঃ এর আঙুল মুবারকের ইশারায় চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়।

নবুওয়াতের ১০ম বছর:
নবুয়্যতের দশম বছরের উল্লেখ যোগ্য ঘঠনা হলো- কুফফারে কুরাইশ যেই চুক্তি নামার ভিত্তিতে মুসলিমদের উপর সর্বগ্রাসী বয়কট আরোপ করেন, সেই চুক্তি নামায় বিসমিল্লাহ বাদে বাকি অংশ আল্লাহর নির্দেশে পোকা খেয়ে ফেলে। ফলে –  ১। মক্কাবাসীদের বয়কট থেকে মুসলিমগণ পরিত্রাণ লাভ করে। ২। রোকানা পালোয়ান ইসলাম গ্রহণ করেন। ৩। তোফয়েল দৌসী ইসলাম গ্রহণকরেন। ৪। আবু যর গেফারী ও গুনীনজেমাদের ইসলাম গ্রহণ। ৫। এবছরেই রাসূল সঃ এর পক্ষে ঢাল হয়ে থাকা প্রিয় চাচা  আবু তালেব ইন্তেকাল করেন। এবং এবছরেই রাসূলুল্লাহ সঃ এর প্রিয় সহধর্মিনী  উম্মুল মু’মেনীন খাদিজা (রাঃ)ও ইন্তেকাল করেন। ৬।

ফলে ব্যথিত হৃদয়ে ইসলামের দাওয়াত নিয়ে রাসুল সঃ তায়েফে গমন করেন কিন্তু পাষান্ড  তায়েফের লোকেরা ইসলাম গ্রহণ করার বদলে শিশুদেরকে লেলিয়ে দিয়ে নবীজী সঃ এর রক্ত বিসর্জিত করে।

 এবছরেই রাসুলুল্লাহ সঃ ৭। হযরত সাওদা ও আয়েশা (রা.)-এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

নবুওয়াতের ১১তম বছর:
নবুয়্যতের এগারতম বছরের উল্লেখ যোগ্য ঘঠনা হলো- ১। মিরাজুন্নাবী সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সিরাত গবেষকদের মাঝে মিরাজের সময় নিয়ে ইখতেলাফ রয়েছে। কারো মতে হিজরতের এক থেকে দেড় বছর পূর্বে ) ২। বিভিন্ন গোত্রের নিকট দাওয়াত পেশ। ৩। মিনায় মদীনার ছয় ব্যক্তির ইসলাম গ্রহণ।৪। মদীনায় ইসলামের শুরু।

নবুওয়াতের ১২তম বছর:
নবুয়্যতের দ্বাদশতম বছরের উল্লেখ যোগ্য ঘঠনা হলো- ১। বাইয়াতে আকাবায়ে উলা (প্রথম)। ২। মদীনায় ১২ জন ব্যক্তি রাসূল সঃ এর কাছে কালিমা পড়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। ৩। নবীজি সঃ মুসআব বিন উমায়ের (রা.) কে তাবলীগের উদ্দেশ্যে মদীনায় প্রেরণ করেন।

তাওয়াফের সময় সীনা ঝুলিয়ে দ্রত হাঁটাকে রমল বলে) ৫। হযরত মায়মুনা ও সাফিয়ার সাথে বিবাহ। ৬। ফাছাক বিজয়। ৭। হাবশার বাদশা নাজাশীর ইসলাম গ্রহণ।

নবুওয়াতের ১৩তম বছর:
নবুয়্যতের ১৩ তম বছরের উল্লেখ যোগ্য ঘঠনা হলো ১। বাইয়াতে আকাবায়ে ছানিয়া (দ্বিতীয়)। ২। মদীনায় ৭৩ জন পুরুষ ও ২জন মহিলার ইসলাম গ্রহণ।

হিজরতের পরবর্তী জীবন:
হিজরী ১ম বছর:

১। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সঃ তার নবুয়্যতের ১৩ তম বছর ৬২২ খ্রীস্টাব্দে আল্লাহর নির্দেশ মক্কা থেকে ইয়াসরিব তথা মাদিনায় হিযরত করেন। ২। ৮ই রবিউল আউয়াল কুবায় প্রবেশ। ৩। মসজিদে কুবা নির্মাণ। ৪। ১২ই রবিউল আউয়াল মদীনায় প্রবেশ ও তাদের প্রাণঢালা সংবর্ধনা। ৫। মসজিদে নববী নির্মাণ ও রাসূলের বাসস্থান নির্মাণ। ৬। ইহুদীদের সাথে চুক্তি। ৭। আযানের সূচনা। ৮। আনসার ও মুহাজিরদের ভ্রাতৃত্ববন্ধন।

হিজরী ২য় বছর:
২য় হিজরীর উল্লেখ যোগ্য ঘটনা হলো ১। কেবলা পরিবর্তন হয়ে বাইতুল মুকাদ্দাস থেকে কাবার দিকে কিবলা নির্ধারিত হওয়া। ২। রমযানের রোযা ফরজ হওয়া। ৩। শাওয়াল মাসে যাকাত হওয়া। ৪। ঈদের নামাযের আদেশ। ৫। জিহাদের অনুমতি। ৬। হযরম ফাতেমা (রাঃ) এর বিবাহ। ৭। ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ সংঘটিত হওয়া। ইত্যাদি

হিজরী ৩য় বছর:
৩য় হিজরীর উল্লেখ যোগ্য ঘটনা হলো ১। মীরাছের হুকুম অবতরণ। ২। মদ হারাম হওয়া। ৩। হযরত ইমাম হাসান রাঃ এর জন্ম গ্রহণ করেন। ৪। রাসূল (সা.)-এর সা হযরত হাফছা ও জয়নাব বিনতে খুজাইমার সাথে বিবাহ। ৫। ওহুদ যুদ্ধ সংঘটিত।

৬। হযরত আমীরে হামজা (রাঃ)-এর শাহাদাত। ৭। প্রখ্যাত ধনাঢ্য ইহুদী কবি কা’ব বিন আশরাফের নিধন।

হিজরী ৪র্থ বছর:
১। হযরত হুসাইন রাঃ এর জন্ম। ২। হযরত উম্মে সালামার (রাঃ)’সাথে বিবাহ। ৩। বীরে মাউনা অভিমুখে সারিয়ায়ে মুনযিরের গমণ।

হিজরী ৫ম বছর:
১। কুরাইশ ও ইহুদীদের সম্মিলিত ষড়যন্ত্র এবং গাযওয়ায়ে আহযাব বা খন্দকের যুদ্ধ সংগঠিত হয়। ২। শাওয়ালের শেষ লগ্নে হযরত আয়েশা ছিদ্দিকা (রা.) এর জননীর ইন্তেকাল হয়। ৩। হযরত যয়নাব বিনতে জাহাশ নবীজীর বিবাহ বন্ধনে আসেন। ৪। মদীনায় ভূমিকম্প ও ও চন্দ্র গ্রহণ হয়। ৫। হজ্জ ফরজ হয়। ৬। নবীজীর দৌহিত্র আবদ ইবনে উসমানের (হযরত রুকাইয়ার গর্ভজাত পুত্রের) ইন্তেকাল হয়। ৭। পর্দা, অজু ও তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল হয়। ৮। মা আয়েশা (রা.)-এর চরিত্রে মিথ্যা অপবাধ আরোপ করা হয় যার প্রেক্ষিতে আল্লাহ তা’য়ালা আয়াত নাযিল করে তাকে পবিত্র ঘোষণা করেন।

হিজরী ৬ষ্ঠ বছর:
হিজরির ৬ষ্ঠ বছরের উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো ১। ঐতিহাসিক হুদায়বিয়ার সন্ধি। ২। নবীজীর ওমরা পালন করার জন্য মক্কায় রাওয়ানা। ৩। সূরা ফাতহ নাযিল হয়।  ৪। দুনিয়ার বিভিন্ন বাদশাহদের নিকট ইসলামরে দাওয়াত। ৫। বায়আতে রেদওয়ান। ৬। হযরত খালেদ ইবনে ওয়ালিদ ও আমর ইবনে আস এর ইসলাম গ্রহণ। ৭। প্রখ্যাত ধনাঢ্য ইহুদী আবু রাফে’ এর নিধন।

হিজরী ৭ম বছর:
হিজরির ৭ম বছরের উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো ১। খাইবার দুর্গ বিজয় হয়। ২। হিংস্র পশু-পাখি খাওয়ার বিধান হারাম হয়। ৩। মুসলিমগণ ওমরাতুল কাযা আদায় করেন। ৪। রমলের হুকুম।

 হিজরী ৮ম বছর:
হিজরির ৮ম বছরে  ১। ঐতিহাসকি মক্কা বিজয় হয়। ২। সুদ হারাম হয়। ৩। আবু সুফিয়ানের ইসলাম গ্রহণ করেন।  ৪। গাযওয়ায়ে হুনাইন সংগঠিত হয়। ৫। গাযওয়ায়ে তায়েফ সংগঠিত হয়। ৬। গাযওয়ায়ে জিইররানা। ৭। নবীজীর পুত্র ইবরাহীম রাঃ এর জন্ম হয়।  ৮। নবী সঃ এর কন্যা হযরত যয়নাব (রা.) -এর ইন্তোকাল।

হিজরী ৯ম বছর:
৯ম হিজরির উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো এবছর  দলেদলে বিভিন্ন গোত্রের লোকেরা ইসলাম গ্রহণ করে। ২। কন্যা উম্মে কুলসুমের (রা.) ইন্তেকাল করেন। ৩। ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে মাদিনায় মুনাফিকরা মসজিদে জেরার তৈরি ধ্বংসকরণ। ৪। বিশ্ব নবীর নেতৃত্বে পরিচালিত সর্বশেষ গাযওয়া সংঘটিত।  ৫। হযরত আবু বকর (রা.) এর নেতৃত্বে ইসলামে সর্ব প্রথম হজ্জ পালিত।  ৬। ঈলা ও লিয়ানের হুকুম।

হিজরী ১০ম বছর:
১। হজ্জাতুল বিদা’ বা বিদায় হজ্জ অনুষ্ঠিত হয় । ২। পুত্র ইবরাহীমের ইন্তেকাল করেন। ৩। বিদায় হজ্জের ভাষণ প্রদান। ৪। হযরত আমর ইবনে আসকে ইয়ামনে প্রেরণ।

হিজরী ১১ম বছর:

১। ২৯ শে সফর মোতাবেক ২৭ শে মে ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে নবীজীর (সা.) অসুস্থতার সূচনা।  ২। হযরত উসামা (রা.)-এর সৈন্যদলের প্রস্তুতি। ৩। সিদ্দীকে আকবরের ইমামতি। ৪। নবীজী (সা.)-এর বাকী-এ গারকাদ নামক স্থানে গমন করেন এবং সেখান থেকে অসুস্থ অবস্থায় ফিরে আসেন। এরপর ১৩ দিন পর্যন্ত জ্বরাক্রান্ত থাকেন। ৫। নবীজীর সর্বশেষ ইমামতি: ৮ই রবিউল আউয়াল বৃহস্পতিবার সূরা মুরসালাত দ্বারা মাগরিবের নামাযে ইমামতি করেন। আর এটিই ছিলো তাঁর জীবনের সর্বশেষ পূর্ণ ইমামতি। অবশ্য শনিবার বা রবিবার জোহরের নামাযে আংশিক ইমামতি তিনি করেছেন। (কাশফুল বারী কিতাবুল মাগাজী)

স্ত্রীগণ : রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর স্ত্রী অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন ছিলেন ১১ জন ছিলেন। তাঁদের মধ্যে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর জীবদ্দশায় দুইজন (হযরত খাদীজা (রাঃ) এবং হযরত যইনব বিনতে খুযাইমা (রাঃ)) ইন্তেকাল করেন। বাকী নয় জন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর ওফাতের সময় জীবিত ছিলেন। তাঁরা হলেন – (১) হযরত আয়েশা (রাঃ), (২) হযরত হাফসা (রাঃ), (৩) হযরত উম্মে সালমা (রাঃ), (৪) হযরত যাইনব বিনতে জাহাশ (রাঃ), (৫) হযরত জুওয়াইরিয়া (রাঃ), (৬) হযরত উম্মে হাবীবা (রাঃ), (৭) হযরত সাওদা বিনতে যাম’আ (রাঃ), (৮) হযরত সাফিয়া (রাঃ), এবং (৯) হযরতর মাইমুনা (রাঃ)।

জিহাদে অংশগ্রহণ : রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় জীবনে সর্বোমোট ২৩টি জিহাদে অংশগ্রহণ করেন। এ সকল জিহাদকে ‘গাযওয়া’ বলা হয়। তন্মধ্যে মোট নয়টি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। যথা- (১) গাযওয়ায়ে বদর, (২) গাযওয়ায়ে উহুদ, (৩)গাযওয়ায়ে আহযাব, (৪) গাযওয়ায়ে বনী কুরাইযা, (৫) গাযওয়ায়েবনী মুস্তালিক, (৬) গাযওয়ায়ে খাইবার, (৭) গাযওয়ায়ে ফাতহে মক্কা, (৮) গাযওয়ায়ে হুনাইন এবং
(৯) গাযওয়ায়ে তায়িফ।
আর রাসূলুল্লাহ (সঃ) নিজে সশরীরে অংশগ্রহণ না করে অপর কাউকে সিপাহসালার নিযুক্ত করে সাহাবায়ে কেরাম -এর জামা’আতকে যে জিহাদ অভিযানে প্ররণ করেছেন, তাকে ‘সারিয়্যা’ বলে। এ ধরনের জিহাদের সংখ্যা ৪৩টি।

৬। শেষ নবীর শেষ ভাষণ:
*  নামাযের প্রতি লক্ষ্য রাখবে
*  যাকাতের প্রতি যত্নবান থাকবে
*  তোমার অধিনস্থ দাস-দাসীদের প্রতি লক্ষ্য রাখবে
*  বহিঃবিশ্ব থেকে আগত প্রতিনিধি দলের সাথে সৌজন্যমূলক আচরণ করবে এবং তাদের উপঢৌকন দিবে।

বিদায় হজ্জের সময়ে রাসূল সঃ থেকে একাধিক হাদীসের বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ সঃ আমাদেরকে পথ ভ্রস্টতা থেকে বাচতে তিনটি জিনিস আকরে ধরার নির্দেশ দিয়েছেন তা হলো-* তোমরা কুরআন সুন্নাহ ও আহলে বাইতকে আকরে ধর তাহলে কখনো গোমরাহিতে লিপ্ত হবেনা।

* কুরআনের একাধিক আয়াত ও হাদীসে জিব্রাইলের মৌলিক শিক্ষার মাধ্যমে একথা প্রতিয়মান যে, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  আমদের জন্য যে দ্বীন ইসলামের শিক্ষা ও আমলের জন্য রেখে গিয়েছেন তার রুপরেখা গোড়ার দিকে তিন ভাগে বিভক্ত ১। আক্বাইদ ২। তাছাওউফ ৩। ফিক্বাহ । (হাদীসে জিব্রাইল,মুসলিম শরীফ)

আমলের রূপরেখায় চার ভাগ এবাদত,মোয়ামালাত,মুহলিকাত ও মুনজিয়াত। প্রত্যেক ভাগে গোড়ার দিকে ১০টি মাসয়ালা অর্থাৎ চার দশে চল্লিশ প্রকার মাসয়ালা শিক্ষা করে আমল করার ও সমাজে প্রচার ও প্রতিষ্ঠার তাওফিক দান করুন। আমিন
নবীজীর মাওলার ডাকে সাড়া দান:
এ ব্যাপারে ঐতিহাসিকগণ একমত যে, নবীজীর ওফাত রবিউল আউয়াল মাসের সোমবার হয়েছে তবে কোন তারিখে হয়েছে তা নিয়ে তিনটি মত পাওয়া যায়-
১। ১২ই রবিউল আউয়াল ২। ২রা রবিউল আউয়াল ৩। ১লা রবিউল আউয়াল। তবে ২রা রবিউল আউয়াল এর মতটিই অধিক গ্রহণযোগ্য।  যে কথা বলে নবীজী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তা ছিলো- اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي وَأَلْحِقْنِي بِالرَّفِيقِ الأعلى
আল্লাহুম্মাগফিরলী, ওয়ারহামনী, ওয়া আলহিনী বিররফীকিল আ‘লা (সুনানে তিরমিযী: ৩৪১৮)

কুরবানীর গরু দিয়ে কি আকিকা দেয়া যাবে?

0


কুরবানীর গরু দিয়ে কি আকিকা দেয়া যাবে?

ঈদুল আযহার দিনে ১০ টি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ

0

https://youtu.be/g-jcN2NLrhw

ঈদুল আযহার দিনে ১০ টি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ

শাইখুল ইসলাম আব্দুল ওয়াহিদ রহঃ এর ৭ম ইন্তেকাল বার্ষিকি

0

শাইখুল ইসলাম আব্দুল ওয়াহিদ রহঃ এর ৭ম ইন্তেকাল বার্ষিকি

আজ শাইখুল ইসলাম, শাইখুল হাদীস মরহুম নায়েবে রাসূল শাহ মুহাঃ আব্দুল ওয়াহিদ (রহঃ)’র ৭ম ইন্তেকাল বার্ষিকি । মোজাদ্দেদে আ’জমে হযরত হাতেম আলী রহঃ এর উত্তরসূরি এই মহান মানুষটি ৩০ বছর বয়সে খানায়ে কা’বার সামনে বসে খিলাফত লাভ করেন। দুধল দরবার শরীফকে শিরক বিদয়াত মুক্ত, রেখে আল্লাহ্ জমীনে আল্লাহর দেয়া জীবন ব্যবস্থা ইসলামের পূর্ণ শিক্ষা ও আমল জারি কায়েমের মারকাজ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সফলভাবে সক্ষম হন।এজন্য মরহুম নায়েবে রাসূল তার জীবনের অধিকাংশ সময়কে ব্যয় দ্বীন প্রতিষ্ঠার মহান কাজেই ব্যয় করেন।বহু দ্বীনি দারস্গাহ প্রতিষ্ঠা করে অগণিত অনুরাগীদের কাঁদিয়ে ২০১৫ সালের (৭ই মে)

 

আজকের এই দিনে আল্লাহ্র ডাকে সাড়া দিয়ে আখেরাতের পথে পাড়ি জমান।আমরা অত্যন্ত ভারাক্রান্ত ও শোকাহত হৃদয় নিয়ে তাঁর আত্মার মাগফিরাত ও জান্নাতুল ফিরদাউসে উচ্চ মাকাম কামনা করছি। তার রেখে যাওয়া পূর্ণাঙ্গ দ্বীন জারি কায়েমের মিশনকে আগিয়ে নিতে তাঁর প্রতিষ্ঠিত “হযরত হাতেম আলী রহঃ ফাউন্ডেশন (HARF) এর কার্যক্রম আমানতদারীর সাথে চালিয়ে যেতে পারি এজন্য মহান রবের সাহায্য কামনা করছি। আপনাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ কামনা করছি। পূর্ণাঙ্গ দ্বীন প্রতিষ্ঠার মারকাজ দুধল দরবার শরীফ সুন্নত তরিকার উপর কিয়ামত পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত থাকুক তা আন্তরিকভাবে কামনা করছি।মাজলীশে শুরা ও কার্য নির্বাহী পরিষদ হযরত হাতেম আলী রহঃ ফাউন্ডেশন (HARF)

 

দুধল দরবারের বিবৃতি- শহীদ ওমর ফারুক ত্রিপুরার খুনিদের অনতিবিলম্বে ফাসি দিতে হবে।

0
শহীদ ওমর ফারুক

শহীদ ওমর ফারুক
নও মুসলিম ওমর ফারুক হত্যার প্রতিবাদে সরব হন।বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার মৃত তয়ারাম ত্রিপুরার ছেলে বেরন চন্দ্র ত্রিপুরা। ৬ বছর আগে ২০১৪ সালে খ্রিস্টান থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন তিনি। মুসলিম হয়ে নাম পরিবর্তন করে রাখেন ওমর ফারুক। এরপর একটি মুসলিম এনজিওর মাধ্যমে ধর্মীয় বিধিবিধান শেখেন। নিজের পরিবারের অন্য সদস্যরাও ইসলাম গ্রহণ করেন। পাশাপাশি তার দাওয়াতে এলাকার আরও ১০-১২ জন মানুষ মুসলিম হন। এরপর তিনি নিজের জায়গায় একটি মসজিদ নির্মাণ করেন । এলাকায় অন্য কোনো শিক্ষিত মানুষ না থাকায় নওমুসলিম ওমর ফারুক নিজেই এই মসজিদে ইমামতি শুরু করেন। ইসলাম গ্রহণ ও বাংলাদেশের অখন্ডতায় বিশ্বাস করার কারণে অনেকদিন থেকেই নওমুসলিম ওমর ফারুককে বিদেশি মদদপুষ্ট স্থানীয় খ্রিষ্টান মিশনারি ও সন্তু লরমা সংশ্লিষ্ট পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল।
সর্বশেষ গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মসজিদে নামাজ আদায়ের পর ঘরে ফেরার পথে ওত পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা তাকে গুলি করে হত্যা করে। শহীদ ওমর ফারুকের কন্যার ভাষ্যমতে তাকে গুলি করার পূর্বেও দুটি অপশন থেকে একটি বাছাই করতে বলাহয়েছিল। ইসলাম ত্যাগের মাধ্যমে জীবন ভিক্ষা অথবা মৃত্যু ! তিনি যে কোনো কিছুর বিনিময়ে একমাত্র সত্য ধর্ম ইসলামকে বেছে নেন। সন্ত্রাসীরা তাকে গুলি করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে স্থান ত্যাগ করে। দুধল দরবারের পক্ষ থেকে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আমরা এই হত্যাকান্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানাই । য়ামরা বিশ্বাস করি ওমর ফারুক রহঃ জান্নাতে পারি জমালেও আমাদেরকে ইসলাম ও এদেশের সার্বভৌমত্য রক্ষার দ্বায়িত্ব প্রদান করে গিয়েছেন ; জীবনের বিনিময়ে হলেও তা রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য । প্রত্যকে ইমানের সর্ব নিæ দ্ববি থেকে শহীদ ওমর ফারুক হত্যার বিচারের দাবিতে স্বস্ব অবস্থান থেকে সোচ্চার হোন। দল-মত নির্বিশেষে পাহারি দেশোদ্রোহী বিদেশী এজেন্টদের রুখতে ঐক্যবদ্ধ হোন। পাহারি সন্ত্রাসীদের গায়ে সামান্য আচর লাগলেও যে সমস্ত কথিত বুদ্ধিজীবিদের মানবতার মায়াকান্না করতে দেখি তারা আ চুপ কেন জাতি জানতে চায় ? তাদের এই দ্বিচারিতাই দেশের সার্বভৌমত্যের বিরুদ্ধে তাদের মুখোশ উন্মুক্ত কওে দিয়েছে। তাই এই সমস্ত বিদেশী এন্টদের কার্যক্রমের উপরে নজরদারি বাড়ানোর জন্য মাননীয় সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। এদের থেকে আপমর জনতাকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছি।
সরকারের প্রতি উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি যেকোনো মূল্যে শহীদ ওমর ফারুকের খুনিদের আইনের আওতায় এনে প্রকাশ্যে ফাসির মঞ্চে বা ফায়ারিং স্কয়াডে মৃত্যু দন্ড কার্যকর করুন। এটা কেবল একজন দেশ প্রেমি মুসলিম হত্যা নয় বরং স্বাধিনতা ও সংবিধানের বুকে গুলি ছোড়া হয়েছে। এই হত্যাকান্ডের বিচার করতে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ পার্বত্য অঞ্চলকে আরেকটি পূর্ব তিমুর বানাবে , যা রাজনৈতিক বা ধর্মীয় কোনো বিবেচনাতেই শুভ ফল বয়ে আনবেনা।

মাওঃ তানভীর হাসান আল-মাহমুদ
পরিচালক- কার্য নির্বাহী পরিষদ
হযরত হাতেম আলী রহঃ ফাউন্ডেশন (HARF) ,(মুখপাত্র -দুধল দরবার শরীফ)
বরিশাল, বাংলাদেশ ।